ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইছেন না অনেকেই

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:34:28

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে খুলনায় দমকা বাতাসের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহত্তর খুলনার দাকোপ-কয়রা ও পাইকগাছা উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ ঝড়ের আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। যেকোনো মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। কেউ কেউ আবার আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়েই ছুটছেন। তবে ভিটেমাটি রেখে যেতে চাইছেন না অনেকেই।

শুক্রবার (৩ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অঞ্চলের আকাশে গুমোট ভাব ছিল। তবে দুপুরের পর মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। উপকূলের নদীতে পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। পানির উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের আতঙ্কের মাত্রা। উপকূলীয় এসব অঞ্চলের মানুষের ভয়, পানি বাড়লেই যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। তাই উপকূলীয় এসব এলাকার অনেকেই প্রাণের মায়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র‌ে আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ। তবে ভিটেমাটি ছেড়ে অনেকেই আবার কোথাও যেতে চাইছেন না।

দাকোপ উপজেলার ৪নং খোনা খাটাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোনা কেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা উপকূলের বাসিন্দা উৎপল কুমার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'নদীতে সকাল থেকেই পানি বাড়ছে। রাতে আমাগে ঘরে পানি উঠতি পারে। তাই স্কুল ঘরে থাকতি আইসি। বাঁধ ভাঙলি তো আমাগে এহানেই থাকতি হবেনে।'

দাকোপের পানখালি এলাকার বাসিন্দা শিউলী বালা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমাগে এহানে তো সব সময়ই ঝড়-বন্যা লাইতে থাহে। এইসব এহন সয়ে গেসে। আর ভিটে ছাইড়ে কই যাব। যা হবার হবেনে, বাড়ি ছাইড়ে যাব না।'

তবে স্থানীয়দের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব মানুষদের অনেকরই গরু, ছাগলসহ হাঁস মুরগি পালন করেন। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের গৃহপালিত পশুগুলো নিতে দেওয়া হয় না। তাছাড়া নিজ বাড়ি ছেড়ে গেলে, জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অপারগতা জানান। 

দাকোপের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'সিডরের সময় এ অঞ্চলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, এবার তার থেকেও বেশি হতে পারে। তাই আমরা সবাই এক হয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার চেষ্টা করব। ইতোমধ্য‌ে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিয়েছে। যারা এখনো যায়নি, তাদের নেয়ার চেষ্টা করছি।'

এ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক করছেন। এতসব আয়োজনের পরেও আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ যেতে চাচ্ছে না। তাই উপজেলা প্রশাসন ও সিপিপি এর সদস্যরা স্থানীয়দের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। দুর্যোগ পরবর্তী প্রস্তুতি হিসেবেও শুকনো খাবার, টিআর চাউল, নগর অর্থ ও ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। মাঝি ও উপকূলবাসীদের সতর্ক করতে চলছে মাইকিং।'

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ারদার বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় জেলার ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় একহাজার ৯৫ জন ও দাকোপ উপজেলায় এক হাজার ৩৬৫জন ও পাইকগাছায় এক হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেবার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।'

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলায় ৩২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা আছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এবং নয়টি উপজেলায় নয়টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১১৪ টি মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর