ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে খুলনায় গুমোট আবহাওয়া

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম স্টাফ করেসপন্ডেন্ট খুলনা বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 12:01:19

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে খুলনায় গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। হালকা মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে খুলনার আকাশ। তবে সকাল পর্যন্ত খুলনার কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি।

শুক্রবার (৩ মে) ভোরেও মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে জারি করা ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এখনো বহাল রয়েছে। খুলনায়ও চলছে একই সংকেত।

সরেজমিনে খুলনার রূপসা নদীতে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই খুলনার সকল নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদী পারাপারের জন্য ট্রলারের উপর ভরসা করছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ৩২৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও নদী তীরবর্তী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পাকা ভবনগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় জেলেদেরকে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত ও চরে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে আসার জন্য বলা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১১৪টি মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, কৃষকরা ক্ষেতে আধাপাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অধিকাংশ জমির ধান পাকেনি। উপায় না পেয়ে আধাপাকা ফসল তোলা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঝড়-তুফান হলে বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকরা আগাম ফসল তুলছেন।

খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘খুলনাসহ আশপাশের অঞ্চলের আকাশে হালকা মেঘ ও গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সন্ধ্যা নাগাদ বা রাতের কোনো এক সময়ে ঘূর্ণিঝড় ফণী খুলনা উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ফণী খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করার সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে ঝড়ের কোনো প্রভাব নেই।’

নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে থাকা কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জাফর রানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখনো কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি। উপজেলার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। তবে হালকা রোদ। তারপরও সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে ১২৬ সদস্যের সাতটি টিম অল্প সময়ের মধ্যেই মাঠে নেমে পড়বে। মানুষকে নিরাপদে নিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও জানান উপজেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এই কর্মকর্তা।

সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা থাকায় কয়রা উপজেলার জনসাধারণ নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩, ৪, ৫ ও ৬নং কয়রা সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে এবং উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জন সাধারণ নিজেদের জান মাল রক্ষার্থে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছাতে শুরু করে। কিন্তু আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্থি ফিরে আসে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়রায় মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ অমবশ্যার গোন (সময়) হওয়ায় নদীতে দেড় থেকে দুই ফুট পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, আইলার প্রাক্কালে যেমন তীব্র গরম অনুভব হয়েছিল, তেমনি মনে হচ্ছে। আর অমাবশ্যার গোন হওয়ায় তারা বাঁধ ভাঙন ও বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন।

অপরদিকে, খুলনার দাকোপ উপজেলার মানুষ জানে একটা ঝড় আসছে, তবে কেমন বড় বা কি হতে পারে তা নিয়ে ধারণা নেই। যারা সচেতন তাঁরা বলছেন। পরিস্থিতি বুঝে চিন্তা করবেন। অনেকে বলেছেন, ঝড় আসলে কি করার আছে। মাঝে মাঝেই তো আসে।

এদিকে জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী’র সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে জেলার ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় ১হাজার ৯৫ জন ও দাকোপ উপজেলায় ১ হাজার ৩৬৫জন স্বেচ্ছাসেবকসহ ২ হাজার ৪৬০জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এবং নয়টি উপজেলায় নয়টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে ১১৪ টি মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আবহাওয়ার সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার (৩ মে) ভোররাত ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫০ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৩০ কিলোমিটার, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর অতবা উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৩ মে বিকেল নাগাদ ভারতের ওড়িশায় উপকূলে অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সন্ধা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারে এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের নদীতে পানি বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আতঙ্কিত উপকূলবাসী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর