‘শ্রেণি বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে’

ঢাকা, জাতীয়

শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:21:51

মহান মে দিবস পালন করেছে দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো। এ উপলক্ষে বুধবার (১ মে) রাজধানীসহ প্রায় সব জেলা ও উপজেলায় র‍্যালি ও মানববন্ধন করেছেন শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মালিকপক্ষ জুলুম নির্যাতন করে প্রতিনিয়ত। কিন্তু ডিউটি করার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। আট ঘণ্টা নয়ম ১০ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। অথচ পান না অতিরিক্ত সময়ের বেতন।

রাজধানীর জাতীয় প্রসক্লাব, নয়াপল্টন, পুরানাপল্টন, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।

শ্রমিক নেতারা বলেন, বেতন-বোনাস ঠিক মতো পান না, এমনকি সাপ্তাহিক ছুটি পর্যন্ত অনেক সময় দেওয়া হয় না। অনেক শ্রমিক মাসিক ভিত্তিতে কাজ করলেও নেই নির্দিষ্ট বেতন। অপর দিকে মালিকদের বেশিরভাগই সরকারের এমপি, মন্ত্রী বা নেতা। ফলে সরকার একটা নিরপেক্ষ অবস্থায় যেতে চাইলেও তাদের প্রভাবে যেতে পারে না। যখন কোনো উপায় না থাকে তখন বাধ্য হয়ে রাজপথে নামতে হয় শ্রমিকদের।

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন বেসরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. দুলাল সরদার। আবগাপ্লুত হয়ে বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিনের উপস্থিতির ভিত্তিতে কাজ করি। আমি কাজ করি সরকারি কলেজে। আমাদের চাকরি জাতীয়করণ হয় নাই। আমরা আমাদের পরিবারকে কী জবাব দেব? ২০ বছর পর আমার সন্তানদের কী জবাব দেব? আমরা আমার সন্তানদের বলতে পারি না যে, বাবারা তোমরা হাতে এটা নাও। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন- আমাদের চাকরি যেন জাতীয়করণ করা হয়।

মে দিবসেও গাড়ি চালাচ্ছেন বজলুর রহমান। তিনি এই পেশায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, প্রতিটি ট্রিপের ভিত্তিতে আমরা টাকা পাই। আমাদের নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই, ট্রিপ হলে বেতন, না হলে নাই। ন্যায্য মজুরি পাই না, যানজটে ট্রিপ মারতে পারি না, টাকা পাব কীভাবে!

বাংলাদেশ প্রাইভেট কার চালক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নেতাকর্মীরা তাদের ন্যায্য বেতন ও সুযোগ সুবিধার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। এ সময় উপস্থিত সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা অবহেলিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত। আমাদের মালিক পক্ষ বেতন নিয়ে ঝামেলা করে। কোনো নোটিশ ছাড়াই আমাদের চালককে চাকরিচুত্য করে। আমাদের ডিউটির কোনো মাপকাঠি নাই। ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। আমাদের দাবি- আট ঘণ্টা ডিউটি করা হোক, এর পরে যে সময় ডিউটি করা হবে তার ওভার টাইম বিলের ব্যবস্থা করতে হবে। সাপ্তাহিক ছুটি দিতে হবে। প্রতি ঈদে বোনাস দিতে হবে।

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের প্রধান খাত গার্মেন্টস সেক্টর। সেখানেও শ্রমিকরা ন্যায্য বেতন না পাওয়া সহ নানান বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন। তিনি র‍্যালিতে অংশ নিয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, মূলত সরকারের মধ্যে যারা সংসদ সদস্য তাদের একটি বড় অংশই মালিক গোষ্ঠী, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক। সরকারের মন্ত্রিপরিষদের মধ্যেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

‘স্বাভাবিকভাবেই সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা দরকার, যিনি মালিক শ্রমিক উভয়েরই স্বার্থ দেখবে। যেহেতু সরকারের মধ্যে মালিক গোষ্ঠীর প্রভাব অনেক বেশি তাই সরকার শ্রমিকদের পক্ষে সেভাবে অবস্থান নেয় না। তারা মালিকদের স্বার্থ সব সময় বিবেচনা করে। পাবলিক সেক্টরে মেটার্নিটি ছুটি ছয় মাস। আর বেসরকারি সেক্টরে এই ছুটি চার মাস। এই বৈষম্য সরকারের করা উচিৎ নয়। কিন্তু সরকার মালিকদের উপর প্রভাব ফেলতে পারছে না। যে কারণে আমাদের নারী শ্রমিকদের মেটার্নিটি ছুটি ছয় মাস হয় নাই।’

তিনি বলেন, এদেশের কৃষক, শ্রমিকদের অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। আর কিছু সংখ্যক মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। এই শ্রেণি বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর