মে দিবসেও মজুরি বঞ্চিত ৩৩ হাজার পাটকল শ্রমিক

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট খুলনা বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 00:12:41

বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস এ দিন। মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা আর শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটার স্বপ্ন দেখারও দিন এটি। তবে মহান মে দিবসেও বকেয়া মজুরি ও বেতন পায়নি খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের ৩৩ হাজার শ্রমিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পাটকল শ্রমিকরা জানায়, মে দিবসেও অর্ধাহারে অনাহারে রয়েছে পাটকল শ্রমিকরা। মে দিবসের দাবি আদায়ের আনন্দের পরিবর্তে পাটকল শ্রমিক পরিবারগুলোতে চলছে হাহাকার। পাটকলের এসব শ্রমিকদের অনেকের ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। দাদন বা ধারদেনা করে চলছে পাটকল শ্রমিকদের সংসার। শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন অতিবাহিত করছে। পাটকল শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন দিতে পারছে না। এমনকি সন্তানদের জন্য ৩ বেলা খাবারও যোগাতে পারছে না। এমন দুর্দশায় পাটকল শ্রমিকদের মধ্যে নেই মে দিবসের আনন্দ।

রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট জুটমিলের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মে দিবসেও খুলনার কোনো পাটকলের শ্রমিকরা মজুরি পায়নি। মে দিবস শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন। কিন্তু এ দিনেও পাটকলের শ্রমিকরা অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছে। আমাদের এখানের শ্রমিকরা ১০ মাস মজুরি পায় না। ধারদেনা করে শ্রমিকরা আর কত দিন চলবে?’

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, ‘৬ থেকে ১০ সপ্তাহ মজুরি না পাওয়া পাটকল শ্রমিকরা মে দিবসের মানে বোঝে না। তারা বোঝে পেট ভরে ভাত খেতে হবে। মজুরি প্রদানসহ ৯ দফা দাবি না মানলে আমরা আবার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। অধিকার আদায়ের দিনেও রুটি-রুজির ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না শ্রমিকরা।’

বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বার বার সময় চেয়েও রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের কোনো মিলেই বকেয়া মজুরি প্রদান করা হয়নি। এছাড়া সম্প্রতি মিলগুলোকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে চালানো হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর ফলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। আমরা আগামী ৩ মে এর প্রতিবাদে জনসভা করব। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মানতে হবে।’

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে ১৩ হাজার ১৭০ জন এবং বদলি শ্রমিক সংখ্যা ১৭ হাজার ৪১৩ জন। পাটকলগুলিতে শ্রমিকদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তাদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৫২ কোটি টাকা।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, খুলনা অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির পরিমাণ ৪২ কোটি টাকা। অপরদিকে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আরও ১০ কোটি টাকার বেতন বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বিষয়টি বিজেএমসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান গাজী শাহাদাৎ হোসেন জানান, আর্থিক সংকটের কারণে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। মিলের শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকদের প্রায় ৯০ লাখ টাকা মজুরি দিতে হয়। সে অনুযায়ী শ্রমিকদের প্রায় ১০ কোটি টাকার শুধু মজুরি বকেয়া পড়েছে।

পাটকলগুলোর কর্মকর্তারা জানান, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত খালিশপুর, দৌলতপুর, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, ইস্টার্ন, আলীম, জেজেআই ও কার্পেটিং মোট ৯টি জুট মিলের প্রায় ৩৩ হাজার শ্রমিক রয়েছে। তাদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে তাদের নিয়মিত মজুরি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে মিলগুলোতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উৎপাদিত পাটজাত পণ্য অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হলে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হতো।

উল্লেখ্য, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ নয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৩ মে জনসভা ও পরবর্তীতে লাগাতার ধর্মঘট এবং অবরোধের আল্টিমেটাম দিয়েছেন পাটকল শ্রমিকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর