উত্তরাঞ্চলে পরিবহন মালিকদের দাপটে গুটিয়ে যাচ্ছে বিআরটিসি বাস

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 21:36:34

বেসরকারি পরিবহন মালিকদের বাধার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের সড়কগুলোতে চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বাস। শুধু বাধাই নয়, সড়কে চলাচল করতে গিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনের নামে পথে পথে চাঁদাও গুণতে হয় সরকারি এই বাসের চালকদের!

রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, রংপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা রুটে চলাচল করতে নিয়মিত দিতে হয় এই চাঁদা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক রুট থেকে বাস প্রত্যাহার করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে বাস মালিক সমিতির নেতাদের দাবি-নিয়ম না মেনে খেয়াল-খুশি মতো রুট তৈরি করে চলাচল করায় বিআরটিসিকে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।

বিআরটিসির পাবনা ডিপো সুপারভাইজার সাদিকুর রহমান মোবাইলে বার্তা২৪.কমকে অভিযোগ করেন, পাবনা রুটে গাড়ি (বিআরটিসি’র বাস) ঢুকলেই বাসপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। না দিলে বাস আটকে রেখে হয়রানি করা হয়। ফলে যাত্রীরা পরবর্তীতে আর বিআরটিসি’র বাসে চড়তে চান না।

এদিকে, গত ১৯ এপ্রিল রাজশাহীতে সড়ক পরিবহন নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে বিআরটিসি’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে তিনিও সরাসরি অভিযোগ করেন বেসরকারি বাস মালিক সমিতির বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবহন মালিক সমিতি সরকারি সড়কেই সরকারি বাস চলতে দিচ্ছে না। ভাবুন, কেমন বেগতিক দশা! তাদের এই ডাকাতি আচরণের কারণে অনেক রুট থেকে আমরা বাসই প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’ তবে তিনি মনে করেন- বিআরটিসির বাস চলার ক্ষেত্রে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করলে দ্রুত এই সংকট কেটে যাবে।

বিআরটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মনিরুজ্জামান বাবু বার্তা২৪.কম-কে জানান, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৪টি ডিপোর অধীনে বিভিন্ন জেলার রুটে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি’র ১১০টিরও বেশি বাস চলাচল করছে। একসময় উপজেলা রুটেও চলতো বিআরটিসি’র ডাবল ডেকার বাস। কিন্তু পরিবহন মালিকদের বাধার কারণে অন্তত ৪২/৪৫টি রুটে বন্ধ হয়ে গেছে।

বিআরটিসির রাজশাহী ডিপোর বুকিং ইনচার্জ ডাবলু সরকার বলেন, ‘রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে ডাবল ডেকার চলতো। এই বাসে বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে এসে আবার বিকেলে ফিরে যেতে পারতেন। কিন্তু বাস মালিক সমিতির বাধার কারণে বিআরটিসির বাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। বিআরটিসির বাস চলাচল করায় তাদের নাকি ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা (পরিবহন মালিক)। কিন্তু সরকারি রাস্তায় সরকারি বাস চলতে পারবে না এটা কেমন কথা!’

তবে বিআরটিসি’র বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ তুলেছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, নিয়ম না মেনে খেয়াল খুশি মতো রুটে বাস চালাচ্ছেন বিআরটিসির ইজারাদাররা। একারণে এমন সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুনজুর রহমান মোবাইলে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বসে ঠিক করে দিয়েছে, কোন রুটে বিআরটিসি চলবে আর কোনগুলোতে প্রাইভেট বাস চলবে। কিন্তু তা মানছে না বিআরটিসির ইজারাদাররা।’

অধ্যাপক মুনজুরের অভিযোগ, সরকার দলীয় কিছু নেতাকে বিআরটিসির বাস পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরা নিজেদের ইচ্ছেমতো রুট তৈরি করেছেন। তারা মাত্র ৫০০ টাকা সরকারি খাতে জমা দিয়ে বাস চালাচ্ছেন। এজন্য দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তখাত এখন বিআরটিসি। তবে বিআরটিসি বাসে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর