১৩ এপ্রিলের ফ্লাইট বিলম্বের এসএমএস ২৮ এপ্রিল!

ঢাকা, জাতীয়

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 18:07:19

২৮ এপ্রিল রাত; গুলশানের পথ ধরে হাঁটছি। সারাদিনের অগ্নিঝড়া গরম শেষে রাতে একটু বাতাস বইছে। এমন সময় মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস। এখনকার স্মার্টফোনে এসএমএস পুরোপুরি দেখার আগেই কয়েকটা শব্দ চোখে পড়ে যায়। যেখানে লেখা রয়েছে, 'জনাব, বিমানের ফ্লাইট বিজি ২০২ আবারও বিলম্ব হয়েছে!'

আমারতো কোনো ফ্লাইট থাকার কথা না! তাহলে? পুরো টেক্সটায় প্রবেশ করলাম। সেখানে লেখা রয়েছে, 'নতুন উড্ডয়নের সময়- ১৩ এপ্রিল ২০১৯ বিকাল ৩টা। আমরা এই অসুবিধার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। বিমানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।'

‘Dear Sir, Biman Flight BG 202 has been further delayed. The revised departure time is 13-Apr-2019 at 15:00lt. We apologize for the inconvenience. Regards Biman’

কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়লাম! আজ কয় তারিখ। ফোনের স্ক্রিন ভালো করে চেক করলাম। আজ ২৮ এপ্রিল ২০১৯, রোববার। আর এসএমএস -এ আসলো ১৩ এপ্রিলের ফ্লাইট বিলম্বের দুঃখ প্রকাশ করে এসএমএস! একটু ১৩ এপ্রিল সকালে ফিরে যাই।

২০১৯ -এর ১৩ এপ্রিল, শনিবার। বাংলায় চৈত্র সংক্রান্তির দিন। প্রায় ১০ দিন আগেই সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরার টিকিট কাটা ছিল বাংলাদেশ বিমানে। সিলেটের ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় বিজি ২০২ ফ্লাইটে করে ২৫ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে যাওয়ার জন্য টিকিট করেছিলাম আমি। অবশ্য ১২ এপ্রিল রাত ৯টা ২০ মিনিটেই দুঃখ প্রকাশের একটি টেক্সট ফোনে আসলো। আকুতি-মিনতি করে যেখানে লেখা- আমার ফ্লাইটটি এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে। সিলেটের পর্যটন মোটেল থেকে এয়ারপোর্ট ১০ মিনিটের দূরত্ব। তাই মনে মনে ভাবলাম, যাক সকালে আশপাশে আরেকটু ঘুরে দেখা যাবে।

‘Biman Flight BG 202 has been delayed. The revised departure time is 13-Apr-2019 at 1230LT. We apologize for the inconvenience. Regards Biman’

যাই হোক, পরদিন ১৩ এপ্রিল সকালে ঘুম ভেঙে দেখলাম আগের রাতে ১১টা ৪১ মিনিটে আরেকটি দুঃখ প্রকাশের টেক্সট এসেছে ফোনে।

‘Dear Sir, Biman Flight BG 202 has been further delayed. The revised departure time is 13-Apr-2019 at 1310LT. We apologize for the inconvenience. Regards Biman’

তার মানে আরো ৪০ মিনিট দেরি হবে! ঠিক আছে। সকালে আরেকটু বেশি ঘুমালাম। সিলেট থেকে ঢাকায় আসা এই ফ্লাইটগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাপ থাকায় সকাল সাড়ে ১১টাতেই মোটেল ছেড়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। ঢাকা এয়ারপোর্টে যে পরিমাণ কঠোর নিরাপত্তা আর হয়রানির বলয়, এই এয়ারপোর্টে ঠিক ততটাই সহজ আর নিরাপত্তাহীনতার ছাড়। এখানে যেন সবকিছুই বেশ সহজ। অনেকেই যাত্রীর সঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করছে। ব্যাগ চেক করার তেমন কোনো দায়ও যেন নেই।

যাই হোক, এয়ারপোর্টে প্রবেশ করে ফ্লাইট তালিকার স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি বিজি ২০২ উড্ডয়ন সময় আবারো পরিবর্তন হয়েছে। পরবর্তিত সময় বেলা ৩টা! দ্রুত মোবাইল বের করে এসএমএস চেক করলাম। নাহ্, এমন কোনো এসএমএস তো আসেনি ফোনে! এর আগে মোট এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট দেরি হওয়ার খবর দু’বার এসএমএস -এ জানালে হলো। আর শেষের আরো দুই ঘণ্টা বিলম্বের এসএমএস না পাওয়াতে এখন ৪ ঘণ্টা এই নিরস বিমানবন্দরে বসে থাকা যায়! যেখানে একটি কফি শপও নেই।

অবশেষে সাদা শার্টের ইউনিফর্মের এক কর্মকর্তাকে পায়চারি করতে দেখে কাছে যেয়ে ঘটনাটা খুলে বললাম। তবে আমার মতো যাত্রী অনেক এখানে৷ আমাকে বললেন, বিজি ২০৬ সাড়ে ১২টায় ছেড়ে যাবে। চেক-ইন সম্পন্ন হলে সিট খালি থাকলে আপনাকে নিয়ে নেব। অবশেষে সেই কর্মকর্তার দয়ায় বিজি ২০৬ ফ্লাইটেই ঢাকায় পৌঁছাতে পারলাম। এটাতো ১৩ এপ্রিলের কথা।

তবে ২৮ এপ্রিল রাতে বিজি ২০২ -এর ফ্লাইট যে আরো দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে ১৩ এপ্রিল, সেই এসএমএস কেন!

০১৯৮৮২৫২৫২৫ নম্বর থেকে বাংলাদেশ বিমানের এসএমএসগুলো আসে। সেই নম্বরে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করব ভাবলাম। তবে ওপারে যন্ত্রের কণ্ঠ শুনে বোঝা গেল, এই নম্বর থেকে শুধু এসএমএস বের হয়। ফোনে কথা বলা যায় না৷

এ সম্পর্কিত আরও খবর