রাজশাহীতে ব্রিজের মুখ বন্ধ করে বিএনপি নেতার খামার নির্মাণ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাজশাহী বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 21:52:20

রাজশাহীর পবা উপজেলার করমজা বিলের নোনা টিকোর ব্রিজের মুখ বন্ধ করে খামারের ঘর নির্মাণ করছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বিলের প্রায় ৭০০ বিঘা ফসলি জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পুরো বিল এলাকার জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে চাষিরা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

১৯৭৯ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধীনে উপজেলার করমজা বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় নোনা টিকোর। ব্রিজটি নির্মাণের ফলে বর্ষার মৌসুমে বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক থাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে এর সুবিধা ভোগ করে আসছে কৃষকরা।

তবে ২০১৮ সালে ব্রিজের মুখে সামনের জমি নিজের দাবি করেন উপজেলার হুজরীপাড়া ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে সেলিম রেজা বাচ্চু। এর জেরে তিনি ব্রিজের মুখ বন্ধ করে খামারের ঘর নির্মাণ শুরু করেন। তবে স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তিনি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।

কিন্তু এ বছর ফের তিনি একই স্থানে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না রেখে ব্রিজের মুখ ভরাট করে আবারও খামারের ঘর নির্মাণ করেছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় প্রায় দেড় হাজার কৃষক। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ফসলের ক্ষতির শঙ্কায় তারা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

মো. রহমতউল্লাহ নামের একজন কৃষক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাচ্চু (খামারের মালিক) জেদ করে এসব করছে। চাষিদের এতে কত ক্ষতি হবে, তা নিয়ে সে একবারও ভাবছে না। চেয়ারম্যান তাকে নিষেধ করছে, শোনেনি। আমরা ইউএনও-কে অভিযোগ দিয়েছি।’

আজিবর আলী নামের ৬৫ বছর বয়সী আরেক কৃষক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এই ব্রিজ যখন ছিল না, তখন বিলের জমিতে কোনো কোনো বছর এক সের (কেজি) ধানও ঘরে নিতে পারতো না চাষিরা। আমরা তখন আন্দোলন করে দাবি জানিয়ে এই ব্রিজ নির্মাণ করিয়েছিলাম। ব্রিজটা হওয়ায় পানি বেরিয়ে যেত। ধান বা অন্য ফসল ডুবে যেত না। কিন্তু ব্রিজের মুখে যেভাবে ভরাট করছে বিএনপি নেতা বাচ্চু, তাতে এবার পানি বের হবে না। সব ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হবে।’

এ বিষয়ে দর্শনপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পবা উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্রপীড়িত ইউনিয়ন হচ্ছে দর্শনপাড়া। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে বড় একটি অংশই আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তারা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে অনুরোধ করেছি, ব্রিজের মুখে বন্ধ না করতে। পরে আমার কথা না রাখায় ইউএনও-কে দিয়েও তাকে নিষেধ করা হয়েছে। তবুও সে নিবৃত্ত হয়নি। কৃষকরা এবং জনপ্রতিনিধিরা বসে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে খামারের ঘর নির্মাণকারী সেলিম রেজা বাচ্চু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি নিজের জমি ভরাট করে খামার ঘর করছি। জমির সকল কাগজপত্রও আমার কাছে আছে। বিলের পানি বের না হলে আমার কী করার আছে?’

এ সম্পর্কিত আরও খবর