নাট-বল্টু না থাকায় ব্যাহত রূপসা রেলসেতুর অগ্রগতি

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, খুলনা, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-28 23:19:09

২০১৮ সালের আগস্ট মাসে খুলনা মংলা রেল সেতুর প্রথম স্প্যান স্থাপন করা হয়েছিল। এর মাধ্যমেই দৃশ্যমান হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প। কিন্তু গার্ডার জোড়া দেয়ার নাট বল্টুর অভাবে এর পরের ৮ মাসে মাত্র ৫টি স্প্যান বসানো সম্ভব হয়েছে। যদিও প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে ৫০টি স্প্যান রয়েছে।

মংলা বন্দরকে রেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করতে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে। যার মধ্যে ছিলেন খুলনা মংলা রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রমজান আলী। প্রকল্প পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি প্রকল্পের।

খুলনা মংলা রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রমজান আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, খুলনা মংলা রেল লাইন প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। এখানে দুটি অংশে কাজ চলছে। রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেল সেতু রয়েছে। যার অগ্রগতি ৩৯ শতাংশ। কিন্তু বাকি রেল লাইন নির্মাণ অংশে ৩১টি ছোট বড় ব্রিজ, ১১১টি কালভার্ট রয়েছে, তার অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। ফলে ব্রিজ নির্মাণ মূল কাজের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। রেল সেতু নির্মাণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ার জন্য সময় মত প্রকল্প সাইটে ব্রিজের গার্ডার স্থাপনের নাট বল্টু ভারত থেকে না আসাকে দায়ী করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘প্রকল্প সাইটে গত আট মাস আগে ২২টি গার্ডার এসে পৌঁছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় নাট বল্টু আসতে সময় লাগে তিন মাস। ফলে গার্ডার স্থাপন সম্ভব হয়নি। তবে এই সময়ের ভেতরে ভারতীয় 'ঠিকাদার লারসেন এন্ড টুব্র' নদীর পাড়ের ভায়াডাক্ট অংশে পাইলিংয়ের কাজ এগিয়ে নিয়েছে, এটা আশাব্যঞ্জক। রূপসা নদীর দুই তীরের ৮৫৫টি পাইলিং এর মধ্যে ৮৫০টি পাইলিং এর কাজ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যেই।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারি সংস্থার কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, কাস্টমস থেকে পণ্য খালাস জটিলতায় ব্যাহত হচ্ছে খুলনা মংলা রেল লাইন প্রকল্পের রূপসা রেল সেতু নির্মাণ কাজ। প্রকল্পের জন্য ভারত থেকে আমদানি করা মালামাল ছাড় করাতে দুই-তিন মাস সময় লাগে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন এন্ড টুব্র’র প্রকল্প ম্যানেজার অম্রিতোষ কুমার ঝা কুমার ঝা বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘পণ্য খালাসের প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে খুলনা মংলা রেল লাইন প্রকল্পের রূপসা রেল সেতু নির্মাণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন সমাধান হয়নি। ভারতীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের ৬৫ ভাগ মালামাল ও জনবল ভারত থেকে আনার শর্ত থাকায় ব্রিজের স্প্যান ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি করা হচ্ছে এবং সেখান থেকে আমদানি করে আনতে হচ্ছে। আমদানি জটিলতার বিষয়টি প্রকল্পের শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রশাসনকে জানানো হয়েছে তবে এখনও কোন সমাধান হয়নি। আমদানি জটিলতায় প্রভাব পড়ছে প্রকল্পের অগ্রগতিতে।'

রূপসা রেল সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘২০১৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেল সেতুতে ১৪৬টি স্প্যান স্থাপন করতে হবে। ইতোমধ্যেই প্রকল্প এলাকায় ৫৫টি স্প্যান এসে পৌঁছেছে। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে ভারতে তৈরি হওয়া সকল স্প্যান প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছাবে।

তিনি জানান, খুলনা মংলা রেল সেতু প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন রূপসা নদীর ভেতরে পাইলিং স্থাপন করা। ইতোমধ্যেই মাটির গুণগত মান বিচার করে নদীর ভেতরকার পাইলিং এর পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার ফলে প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৩’শ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল ব্রিজের জন্য নদীর মধ্যে ৭২টি পাইলিং এর প্রয়োজন হবে। যেখানে পদ্মাসেতুতেও এ পাইলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর জন্য ভারী ও আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় এ যন্ত্রপাতি নেই। আগামী মাসে ভারতের চেন্নাই থেকে এই যন্ত্রপাতি এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তখন শুরু হবে সেতু নির্মাণের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ।

প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে খুলনার জেলা প্রশাসন হেলাল হোসেন জানান, সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্পের প্রতিবেদন প্রতিনিয়ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যাতে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। সেই জন্য সকল প্রকার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় দুই দফা বাড়িয়ে ২০২০ নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর