প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েছে পরিবার

ময়মনসিংহ, জাতীয়

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-10 01:18:01

'দাদার (এসআই গৌতম রায়) হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে থানা-পুলিশ, আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কম ধরনা দেইনি। বিচারের আশায় গত নয় বছর ধরে নানা জায়গায় ছুটতে ছুটতে আমাদের পরিবারের সদস্যরা এখন ক্লান্ত, অসহায়। সবাই শুধু আমাদের আশ্বাসই দিয়ে গেছেন। দাদার বিচারের আশায় থাকতে থাকতে আমাদের বাবা ইন্দু ভূষণ রায় ও মা বকুল রানী রায়ও স্বর্গীয় হয়েছেন। কিন্তু গত নয় বছরেও দাদার হত্যার আর বিচার পাইনি। তাই দাদার হত্যার সঠিক তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'

বার্তা২৪.কম-এর কাছে এভাবেই এসআই গৌতম হত্যাকাণ্ড মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি তুলে ধরেন, তার ছোট ভাই সাংবাদিক তিলক রায় টুলু।

তিনি বলেন, 'দাদার হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত ঘটনা। যে পিস্তল দিয়ে দাদাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেই পিস্তল পুলিশ আজও উদ্ধার করতে পারেনি। দুজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকার আসল অপরাধী চক্রকেও পুলিশ চিহ্নিত করতে পারেনি। তাই আমরা অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি তুলেছিলাম। যেহেতু আমরা মামলার বাদী নই, তাই পত্রিকার মাধ্যমেও এ আপত্তি দিয়েছিলাম। অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এখন আর কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। যতটুকু শুনেছি, এ মামলায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছিল। তবে তাদের সবাই জামিনে আছে। এখন আর মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছুই জানি না।'

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গৌতম রায়ের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জে। তিনি রাজধানী ঢাকার বংশাল থানায় পুলিশের এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। চাকরি সূত্রে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার ওয়ারীতে বসবাস করতেন।

২০১০ সালের ১৯ শে এপ্রিল পেশাগত কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন গৌতম। পথিমধ্যে ধোলাইখালের মোহন সাহা স্ট্রিটের আশরাফ ইলেকট্রনিক্সের সামনে সন্ত্রাসীরা গৌতমকে লক্ষ করে একাধিক গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার গৌতম রায়কে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণও হাসপাতালে ছুটে যান।

অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। কয়েকজন আটকও হয়। ২০১৩ সালে এ মামলায় পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি তোলে গৌতমের পরিবার।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, গৌতম রায় গৌরীপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নেত্রকোনার পুর্বধলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পূর্বধলা ভোরের কাগজের প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা কমিটি ও জেলা উদীচী ও খেলাঘরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

তরুণ বয়সে তিনি অধিকার আদায়ে স্থানীয় কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের সংঘটিত করে এলাকায় জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তাই এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠে তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর। কিন্তু দীর্ঘ নয় বছরেও বিচার না পাওয়ায় পরিবারের মতো এলাকাবাসীও গৌতমের বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

দাম্পত্য জীবনে এসআই গৌতম রায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে গৌরব রায় ঝলক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। মেয়ে অদিতী রায় ঝিলিক পড়াশোনা করছেন, ঢাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

গৌতমের ছেলে গৌরব রায় ঝলক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে নয় বছরেও আমরা বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার পাইনি। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি বাবার হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি। মৃত্যুর পূর্বে বাবার হত্যার সুষ্ঠু বিচার যেন দেখে যেতে পারি, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।'

গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক ক্লু লেস হত্যার ঘটনা তদন্ত করে বের করেছে। তাহলে কেন এসআই গৌতম হত্যায় যারা জড়িত, তাদের বের করতে পারছে না? একজন পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রাপ্তির জন্য পরিবারকে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে এই বিষয়টি স্থানীয় ভাবে পুলিশের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর