ভেষজ চিকিৎসার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 03:58:19

দেশজ চিকিৎসা সেবার গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমাদের দেশে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা হয়, ইউনানি চিকিৎসা হয়, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হয় এগুলোরও কিন্তু গুরুত্ব আছে। আপনারা জানেন, সারা বিশ্বব্যাপী ভেষজ জিনিসের একটা ভীষণরকম চাহিদা। কাজেই আমরা এ চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছি, গবেষণা করছি যাতে চিকিৎসা পদ্ধতিটা আরও উন্নত হয়। সেদিকে আমরা লক্ষ্য দেব।'

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ও জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকলের সুস্থতা নিশ্চিতকল্পে ‘স্বাস্থ্যসেবা অধিকার-শেখ হাসিনার অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার সুফল জনগণ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। চিকিৎসা সেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমি যখন দ্বিতীয়বার সরকারে আসি তখন দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৬৬ বছর। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশের মানুষের গড় আয়ু আজকে ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে।'

'তবে এখানে একটা বিষয়, আমি যখন হিসেব নিলাম তখন দেখলাম ছেলেদের গড় আয়ু একটু কম, মেয়েদের বেশি। মেয়েরা আবার একটু বেশি বাঁচে। বোধহয় মেয়েরা একটু কষ্ট সহিষ্ণু সেজন্য বোধহয় একটু বেশি বাঁচে। এজন্য আমি ছেলেদের বলব, আপনারা আমাদের নিজেদের সম্পর্কে একটু সচেতন হন, নিজেরা ভালো থাকার চেষ্টা করেন, যাতে বেশি বাঁচতে পারেন' বলেও পরামর্শ দেন সরকার প্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, 'সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে শুধু সরকার একা নয়, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমরা মানুষের ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে পারব। বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার জন্য এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ সুযোগ দিচ্ছি। শিশুদের ইনকিউবেটর মেশিন আনার বিষয়ে ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছি।'

তিনি বলেন, 'দেশে চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন, পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল নিয়োগ, পরিবার পরিকল্পনা, নার্সিং সেবার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, আইন ও নীতিমালা প্রণয়নসহ স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। ফলে সমাজের সকল স্তরের জনগণের প্রয়োজনীয় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তি বহুলাংশে লাঘব হয়েছে।'

এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম মেয়াদের সরকারের সময়কার কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, 'আমি যখন প্রথমবার সরকারে এলাম তখন স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করলাম। সেটা ভালো চলছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য পাঁচ বছর পর সেটা বন্ধ করে দিল।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'গ্রাম পর্যায়ে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত নির্মিত প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার প্রশিক্ষিত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।'

কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এ পর্যন্ত ৮৫ কোটিরও বেশি পরিদর্শনের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। স্বাস্থ্যখাতে সরকারের এ উদ্যোগ সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।'

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় জিপ গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর