‘রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট কথায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়’

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-09-01 01:22:24

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, তা মানুষের স্বাস্থ্য তথা জীবনের জন্য হুমকি। আর রোহিঙ্গাদের যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট তা কথায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট পর্যবেক্ষণে কানাডা সরকারের নিয়োগ করা বিশেষ দূত বব রায়ে এমন কথাই বলেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি তার অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন কানাডা সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের এমন দুর্দশার কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে সাড়ে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়েছে এসেছে। মারা গেছে ৯ হাজারের বেশি। এ ছাড়া আহত হয়েছে কয়েক হাজার। সিবিসি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, এমন ভয়াবহ সামরিক অভিযানের, জাতিসংঘ যাকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে, বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতারা যখন সোচ্চার হন তখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বব রায়েকে মিয়ানমারে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেন। এর আগে বব রায়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তিনি এই অঞ্চলের বিভিন্ন নেতা, কর্মকর্তা ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বব তার প্রতিবেদনে নারীদের দুঃখ-কষ্টের বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনী নারীদের ওপর যে বর্বর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে তা তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারীদের কাছ থেকে শুনেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, যৌন নির্যাতনকে এখানে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের যারা শিকার হয়েছেন তাদের অনেকের শরীরে তার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। রায়ে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত সম্পদও দরকার। মানবতাবিরোধী অপরাধের যে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হতে হবে। সেইসঙ্গে যারা নির্যাতনের ফলে নানাভাবে আহত হয়েছেন তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। রায়ে আরও বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের তথ্য সংগ্রহ করতে সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন একটি প্রতিনিধি দল পাঠায়। কিন্তু মিয়ানমার সরকার সেই প্রতিনিধি দলকে রাখাইনে প্রবেশ করতে দেয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কী ঘটেছে তার একটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিয়মতান্ত্রিক তদন্ত অবশ্যই হওয়া দরকার এবং গত কয়েক বছরের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করা দরকার। আর আন্তর্জাতিক এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে কানাডা সরকারের সংশ্লিষ্টতা থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদআউট বর্ডারস বলেছে যে, তারা মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে দেখতে পেয়েছে, গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযানে ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলোর অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তারা যে অনিয়ম করেছে তা তদন্ত করতে দিতে নারাজ মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনী। আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বানও জানানো হয় মানবাধিকার গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে। বব রায়ে বলেছেন, নতুন বছরে তিনি আবারও বাংলাদেশে আসবেন এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ দেওয়ার আগে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর