রঙে আনন্দে দেশজুড়ে বর্ণিল বৈশাখ

বিবিধ, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 03:50:35

ঐতিহ্যবাহী নানা অনুষ্ঠান আর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। ঢাক-ঢোল, বাদ্য  নাচ-গানের মধ্য দিয়ে মহা ধুমধামের সঙ্গে বছরের প্রথম দিনটিকে পালন করছেন দেশবাসী।

পুরাতন গ্লানিকে মুছে ফেলে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তিপূর্ণ নতুন বাংলা বছরের প্রত্যাশায় নতুনকে বরণ করে নিয়েছে সব শ্রেণি পেশার মানুষ।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের বৈশাখের আগমনী রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ সুরের মূর্ছনায় শুরু বৈশাখী উৎসবের। রমনার বটমূলের মতো দেশের প্রতিটি বিভাগ জেলা উপজেলায় নানা আয়োজন পালিত হচ্ছে বৈশাখ। কোথাও বসেছে মেলা, কোথাও বা আয়োজন চলছে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন।

 

চট্টগ্রাম
মঙ্গল শোভাযাত্রা, চিরায়ত বৈশাখী মেলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে বাংলা ১৪২৬ সালকে বরণ করছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ। রোববার সকাল সাড়ে ৯ টায় নগরীর সার্কিট হাউজ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

ডিসি হিলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলা আয়োজন করেছে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জিমনেশিয়াম মাঠে এবং সিআরবি শিরিষ তলায় চলছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ঢোলক বাদন, গান, আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক, কবিগান, লালনগীতি, মাইজভান্ডারী ও মরমী গান, উপজাতীয় শিল্পীদের পরিবেশনা,সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের পরিবেশনায় দলীয় সঙ্গীত, বৃন্দ আবৃত্তি, কবিতা পাঠ, সম্মাননা প্রদান এবং বৈশাখী মেলা।

ডিসি হিলের আশপাশে এক কিলোমিটার এলাকায় বসেছে চিরায়ত বৈশাখী মেলা। নজরুল স্কয়ারকে ঘিরে লাখো মানুষের ঢল। সকাল ১০ টায় চারুকলা ইনস্টিটিউটের বর্ষবরণ ও বিদায় উপলক্ষে মঙ্গলশোভাযাত্রা বের হয়।

রংপুর

সারাদেশের মতো রংপুরেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের আয়োজন চলছে। নববর্ষ উদযাপনে বাঙালি সংস্কৃতির রঙে ঢঙে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে উত্তরের প্রাচীণতম জেলা রংপুর।

সকালের সূর্যের আলো চারদিক ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাক-ঢোলের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নগরীর আশপাশ। পহেলা বৈশাখের ডাকে ছড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে রুখে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির বার্তায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার।

সকাল ১১টায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

এছাড়াও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথক আনন্দ র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

রংপুর মহানগরী থেকে একটু দূরের গ্রামগঞ্জে চলছে নাগর দোলা, পুতুল নাচ, লাঠি খেলা, পাতা খেলা, হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উৎসবসহ বৈচিত্রময় সব আয়োজন। আবার কোথাও বসেছে বৈশাখী মেলা।

গোপালগঞ্জ

সারাদেশের ন্যায় পহেলা বৈশাখ উদযাপনে আনন্দ উচ্ছাসে মেতে ওঠে গোপালগঞ্জবাসী। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে গোপালগঞ্জে সকালে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। জেলা প্রশাসন, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উদীচী,বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, ত্রিবেনী একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাক ঢোল, বিভিন্ন রং-বেরংয়ের ব্যানার ফেস্টুন, গ্রামীন নানা উপকরন নিয়ে এবং মেয়েরা গ্রামীন সাজে সেজে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে এবং জেলার অন্যান্য উপজেলা গুলিতে আলাদাভাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান পালন করে।

খুলনা

পহেলা বৈশাখে ভোরের প্রথম আলো ফুটতেই খুলনায় শুরু হয় বৈশাখ আবাহন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা ও লোকজ সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আয়োজন। হরেক সাজে সেজে আনন্দ-উৎসবে মেতেছে সবাই। নেচে-গেয়ে, রং লাগিয়ে একে অন্যের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করছে খুলনাবাসী।

প্রতিবছরের ন্যায় ভোরের সূর্যোদয়ের পর পরই উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী খুলনা জজকোর্টের সামনের সড়কে এসা হে বৈশাখ গানের মাধ্যমে খুলনার প্রথম বৈশাখী উৎসব শুরু করে।

খুলনা জেলা প্রশাসনের অয়োজনে বৈশাখী গানের আয়োজন হয় নগরীর বিভাগীয় জাদুঘরের বকুল তলায়। নানা রংয়ের ফেস্টুন, ঘোড়া, দোয়েলসহ বর্ণিল সাজের সাথে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলাসহ শোভাযাত্রাটি যখন কেডিএ এভিনিউ অতিক্রম করছিলো তখন আশপাশের মানুষ হাত নেড়ে অভিনন্দন জানায়।

মেহেরপুর

মাথাল মাথায় চাষী, জাল ঘাড়ে নিয়ে জেলে, কামার, কুমার আর ঋষি সবাই যেন একই সুতোয় গাঁথা। ঐক্যবদ্ধ যাত্রার মধ্য দিয়ে জানান দিলেন আমরা সবাই বাঙালি। আবহমান বাংলার এমনই চিরায়ত দৃশ্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুর জেলা জুড়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আলোচনা সভা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ষ বরণ করা হয়।

নড়াইল

আজকের দিনে সবশ্রেণির মানুষ যেরুপে সেজেছে তার মতো রঙিন সাজে নড়াইলকে সাজাতে চান সকলে। নিজ জেলাকে গড়তে চান স্বয়ং সম্পূর্ণ জেলা হিসেবে।  নববর্ষের এই দিনে কাধে কাধ মিলিয়ে নড়াইলকে একটি মডেল জেলা হিসাবে গড়ে তুলব। দুর্নীতি, মাদক, বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানিকে না বলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নড়াইলবাসী। নববর্ষ উপলক্ষে ছয়দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

রাঙামাটি

মঙ্গল শোভাযাত্রার  মধ্য দিয়ে নববর্ষকে-১৪২৬ বরণ করলো রাঙামাটিবাসী। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বাংলা নববর্ষকে পালন করে সর্বস্তরের জনসাধারণ। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাঙামাটিতে দিনব্যাপী কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজন করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে নানা আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ ১৪২৬ উদযাপিত হয়েছে। রোববার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা বের হয়।  পরে বের হয় আনন্দ র‌্যালি। র‌্যালিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা ঐহিত্যবাহী পোশাক পড়ে অংশ নেয়। এর আগে জেলা প্রশাসকের বাংলোয় পান্তা ভাতের আয়োজন করা হয়।

ফরিদপুর

দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৬ সালকে বরণ করছে ফরিদপুরবাসী। এ উপলক্ষে রবিবার সকালে ফরিদপুর শহরের কোর্ট চত্বরে বর্ষবরণের আয়োজন করে ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিক উন্নয়ন সংস্থা। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ও বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়র খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বণার্ঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। পরে বাংলার ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খেলা হা ডু ডু, লাঠি খেলা ও সাপ খেলাসহ বিভিন্ন খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলায় একযোগে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ।

ময়মনসিংহ

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখের প্রথম দিনে মঙ্গল শোভাযাত্রা নেমেছে মানুষের ঢল। আনন্দ র‌্যালির সব পথ এসে মিলেছে ব্রক্ষপুত্র নদঘেষা জয়নুল উদ্যান বা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। 

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও সুখি-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে নতুন আশায় পথচলার অঙ্গীকার করেছেন সবাই। এজন্যই বিগত বছরের জীর্ণ মালিন্যকে পেছনে ফেলে নতুনকে বরণ করে নিয়েছে ময়মনসিংহবাসী। বাঙালির চিরায়ত উৎসবের দিন পহেলা বৈশাখে আজ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে হালখাতা। মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে ক্রেতাদের।

সিরাজগঞ্জ

‘বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনের বাঙালি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়। জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব পালিত হচ্ছে।

কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ পহেলা বৈশাখ পালিত হচ্ছে। কুষ্টিয়া পৌরসভার আয়োজনে আজ রোববার ভোর ৬টার দিকে পৌর পুকুরে প্রদীপ নৌকা ভাসিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র আনোয়ার আলী।  মঙ্গল শোভাযাত্রা,  আনন্দ র‌্যালি  আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নৃত্য সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে পুরো জেলায় পালন করা হয় বাংলা নববর্ষ।

বগুড়া

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বগুড়ায় পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। বছরের নতুন দিনকে বরণ করে নিতে মঙ্গলপত্র পাঠ, পুতুল নাচ, লাঠিখেলা, লোকগীতি, পালাগান, মাছ কাটার গান, লালনগীতি, পান্তা  উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

‘বাংলার মুখ’ এর ব্যবস্থাপনায় শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। মেলায় প্রতিদিন থাকছে বর্ণীল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, মোটরসাইকেল খেলা, লাঠিখেলা, সাপখেলা, পাতাখেলা, বানরখেলা, মোরগ লড়াই।

 একইভাবে রাজশাহী, লালমনিরহাট, নওগাঁ, ভোলা, বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেটসহ সব জেলা উপজেলা শহরে নানা আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় সর্বস্তরের মানুষ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর