বিচারহীনতায় বাড়ছে যৌন নির্যাতন!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 05:43:01

দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে না পারায় দেশে যৌন নির্যাতনের ভয়াবহতা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, মামলা চলাকালীন বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি, সমাজের মানুষকে পাশে না পাওয়ায় যৌন নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে না।

পুলিশের দাবি, অপরাধী যেই হোক না কেন, অপরাধ করে কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে যৌন হয়রানি ও সহিংসতায় শিকার হয়েছেন মোট ১৭৩ জন। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছে অটজন, প্রতিবাদ করায় ১২ জন খুন ও ১২০ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং স্কুল যাওয়া বন্ধ করেছেন ছয়জন। আর চলতি বছরে এখনো পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন মোট ২৮ জন। এসব ঘটনায় আত্মহত্যা করেছেন তিনজন।

‘শিশু অধিকার সংরক্ষণে ২০১৮-এর পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে ২৮ প্রতিবন্ধী শিশুসহ ৫৭১ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয় এবং ৬ শিশু ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে।

এ বিষয়ে আসক’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘যৌন নির্যাতন বাড়ার একমাত্র কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এখনো পর্যন্ত এমন ঘটনায় আমরা কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারিনি। ফলে এক শ্রেণির খারাপ মানসিকতার লোক বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। মিডিয়াতে না আসলে আমরা অনেক ঘটনা জানতেই পারি না। ফলে অধিকাংশ ঘটনারই কোনো বিচার হয় না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সাদেকা হালিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের দেশের যৌন নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। স্কুল-কলেজ, মাদরাসায় যৌন নির্যাতনের ঘটনাও আমরা জানি। অনেক শিক্ষক ছাত্রীদেরকে ছাত্রী হিসেবে দেখেন না৷ ফলে তাদের হাতে ছাত্রীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আর প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সালে উচ্চ আদালতের একটি রায় আছে৷ সেখানে বলা আছে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি থাকতে হবে৷ কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই সেটি নেই। এসব বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে।’

অ্যাডভোকেট আমিনুল গণী টিটো বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিচারহীনতা নয়, মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে যৌন নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের একটি মামলা হলে অনেক সময় সে মামলার তদন্তের ত্রুটি থাকে, সাক্ষী আসে না। আবার ঢাকা শহরের অধিকাংশ সাক্ষী ভাড়াটিয়া হওয়ায় অন্যত্র চলে গেলে তাদের আর পাওয়া যায় না। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেক সময় ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা উঠিয়ে নেয়। অনেক আসামি সাক্ষীকে ম্যানেজ করে ফেলে। অর্থাৎ দীর্ঘসূত্রিতার কারণে যৌন নির্যাতনের মামলাগুলোর ধীর গতি রয়ে যায়।’

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘটনায় অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ফেনীতে মাদরাসা ছাত্রীর ওপর সহিংসতার ঘটনায় পুলিশই সবার আগে আগুন নিভিয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর