মৃত্যুর কাছে হার মানল মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-14 03:50:37

মৃত্যুর কাছে হার মানল ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় অগ্নিদগ্ধ মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত ৯টা ৩৫মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। নুসরাতকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘রাত ৯ টা ৩৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় দগ্ধ মাদরাসা ছাত্রী মারা গেছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে নুসরাতকে বাঁচানোর জন্য। তবে ডিপ বার্ন হওয়ায় প্রথম থেকেই বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ ছিল। আজকেও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। কাল সকালে পোস্টমর্টেম করা হবে। আজকে লাশ হিমঘরে রাখা হবে।’

এর আগে রাত ৯ টার দিকে ওই মাদরাসা শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান প্রফেসর ডা. আবুল কালাম জানিয়েছিলেন, ‘তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’

সোমবার (৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নুসরাতের উন্নতি চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে ডা. সামন্ত লাল সেনকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তার চিকিৎসার কাগজপত্র একই দিনে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয় ঢামেক হাসপাতাল থেকে। পরে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসার ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।

ভিডিও কনফারেন্স শেষে অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ওই মাদরাসার শিক্ষার্থীকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো যায় কিনা সে বিষয়ে কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা তার শারীরিক অবস্থা দেখে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর জন্য না করেছে। কিন্তু তারা কিছু সাজেশন দিয়েছেন।’

সাজেশন অনুযায়ী একই দিনে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ওই ছাত্রীর একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচার করা হলেও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকেই যেতে থাকে।

ঢামেকের বার্ন ইউনিটের ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার শরীরের ৮০ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছে। মেয়েটির বুক-পিঠ পুড়ে এমনভাবে ভেতরের দিকে ঢুকে গেছে যে ফুসফুস ওঠানামা করতে পারছিল না।

উল্লেখ, গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান ঐ ছাত্রী। তার বান্ধবীকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ পেয়ে ছাদে যান ঐ ছাত্রী।

সেখানে বোরকা পরা চার থেকে পাঁচ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে ফেনী থেকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

এদিকে ঐ ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ-দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে ঐ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। এই ঘটনায় তার মায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ এখন কারাগারে আছেন।

আরও পড়ুন: মাদরাসা ছাত্রীর অবস্থার উন্নতি দেখছেন না চিকিৎসকরা

এ সম্পর্কিত আরও খবর