বাংলাদেশে প্রাণঘাতী সি অরিস ছত্রাকের অস্তিত্ব!

ঢাকা, জাতীয়

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 05:43:28

প্রাণঘাতী ছত্রাক ক্যান্ডিডা অরিসের (সি অরিস) অস্তিত্ব থাকতে পারে বাংলাদেশে। এই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে একজন বাংলাদেশি দেশে ফিরে এসেছেন। আবার ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে এসে একজন আমেরিকানের শরীরে এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ে। এই ওষুধ প্রতিরোধী ছত্রাকটি দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

সি অরিসের কারণে মাল্টিপল এন্টি ফানজাল ড্রাগস প্রতিরোধহীন হয়ে পড়ে, স্ট্যান্ডার্ড ল্যাবরেটরি মেথডেও চিহ্নিত করা দুরুহ হয়ে পড়ে, সঠিক প্রযুক্তি ছাড়া ভুলভাবে চিহ্নিত হতে পারে এবং এটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার সক্ষমতা রাখে। তাই আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ অ্যান্ড প্রিভেনসন বিভাগ এই ছত্রাককে সতর্কতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে বলেছে। একই সঙ্গে সি অরিসে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত চিহ্নিত করে হাসপাতালে রেখে সেবা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। যেন এটি ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

সিঙ্গাপুরের দৈনিক স্ট্রেইট টাইমস জানাচ্ছে, এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে তিনজন ব্যক্তি এই রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরা সকলেই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়েছেন, আরেকজন চিকিৎসকদের কথার বিরুদ্ধে যেয়ে সিঙ্গাপুর ছেড়েছেন এবং শেষজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের ইনফেকসন প্রিভেনশন অ্যান্ড এপিডোমলজির পরিচালক ডা. লিং মই লিন বলেন, `ক্যান্ডিডা অরিস চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই তিনজন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া এই তিনজন রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছেন সকলকেই পরীক্ষা করা হয়েছে।’

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যান্ডিডা অরিস প্রধান ছত্রাকরোধী মেডিকেশনগুলোর প্রতিরোধী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে ফেলে। এটি বাতাসের মাধ্যমে নয়, সরাসরি সংস্পর্শে ছড়ায়।

সিডিসি’র মতে, এই ছত্রাকে আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকই ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।

সিঙ্গাপুরে এই রোগে প্রথম আক্রান্ত হন ৫২ বছর বয়সী একজন নারী। প্রথমেই চিহ্নিত হওয়ায় যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাকে কোনো ধরনের ছত্রাকরোধী ওষুধও প্রয়োগ করা হয়নি।

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে একজন বাংলাদেশি তরুণ সিঙ্গাপুরে যান চিকিৎসা করানোর জন্য। মেটাস্ট্যাটিক কার্সিনোমা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি এর আগে বাংলাদেশে তিনটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে প্রথমে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার রক্তে ফ্লুনাজোল রেসিসট্যান্ট সি অরিসের অস্তিত্বের চিহ্ন পাওয়া যায়।

আরেক ধরনের ছত্রাকরোধী রয়েছে এন্টিডুলাফাঞ্জিন নামে। যা ছত্রাকরোধে সাহায্য করে। ২৪ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি রোগীকে এই চিকিৎসার পরামর্শ দিলে দশদিন পর তিনি চিকিৎসা বন্ধ করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

এই রোগে আক্রান্ত যে আরেকজন আমেরিকান নাগরিককে পাওয়া গেছে তিনি এই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি যখন বাংলাদেশে বেড়াতে যান, তখনই এই রোগে আক্রান্ত হন।

এই মাল্টিড্রাগ রেসিসট্যান্স রোগের বিষয়ে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ক্যান্ডিডা কোনো কঠিন ছত্রাক আক্রমণ নয়। এন্টিবায়োটিকের ফলে সাধারণত এটি মুখে ছড়ায়। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে ক্যন্ডিডা অরিসে আক্রান্তের বিষয়ে এখনো জানা যায়নি। তবে এটি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার মতো কোনো রোগ নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের শহর ইলিনয়সে ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৫৪ জন, নিউইয়র্কে ৩০৯ জন এবং নিউ জার্সিতে ১০৪ জন এই ক্যান্ডিডা অরিসে আক্রান্ত হয়েছে। যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিডিসি'র মাইকোটিক ডিজিজ ব্রাঞ্চের প্রধান ড. টম চিল্লের বুধবার এনবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘এটি সাধারণ ক্যান্ডিডার মতো আচরণ করে না। বরং এই ছত্রাক অনেকটা ব্যাকটেরিয়ার মতো।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর