ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস আজ

বিবিধ, জাতীয়

কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 08:17:10

আজ ৪ এপ্রিল, ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজার বাংলোয়  ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন ২৭ সেনাকর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ বৈঠকে, প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেডে।

ওই দিনের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানী, তৎকালীন মেজর সিআর দত্ত, মেজর জিয়াউর রহমান, কর্নেল এমএ রব, রব্বানী, ক্যাপ্টেন নাসিম, আব্দুল মতিন, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্র মানিয়ম, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, লে.সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কেএম শফিউল্লাহ প্রমুখ।

এখান থেকে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে উঠে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ কয়েকটি সেক্টরের কমান্ডাররা বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন।

ম্যানেজার বাংলোসহ পাশ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মুখরিত। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার তুলে নেয়া হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিজড়িত তেলিয়াপাড়া চা বাগান স্মৃতিসৌধ এলাকা বর্তমান সময়ে আকর্ষণীয় পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ, ম্যানেজার বাংলো ও চা বাগানের সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে আক্ষেপের বিষয় হলো, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও ঐতিহাসিক এ স্থানটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। অথচ এই স্থানটিকে সংরক্ষণ করে একটি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নির্মাণ করলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোহাম্মদ আলী পাঠান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ি সদরদপ্তর ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম প্রধান স্বাক্ষী তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলো। মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতিচিহ্নকে সংরক্ষণের জন্য আমরা অনেক কথা বলছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি’।

অনুযোগের সুরে তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের মে মাসের ৭ তারিখে তেলিয়াপাড়াতে একটি মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেলাল মুর্শেদ খান বীর বিক্রম এই তেলিয়াপাড়াকে ভবিষ্যত প্রজন্মের উপস্থাপনের জন্য সেখানে একটি মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষনা দিয়ে ছিলেন। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি মহা পরিকল্পনা করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় এ কমপ্লেক্সটি করার জন্য এলজিইডিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সে অনুসারে পরিকল্পনা করা হলেও পরবর্তিতে ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি) বোর্ড অব ডাইরেক্টরির সিদ্ধান্ত নেয় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিবেশ নষ্ট হবে। এমন অজুহাতের মুখে আজ পর্যন্ত এ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি’।

তিনি আরো বলেন, ‘সমগ্র দেশবাসীর কাছে তেলিয়াপাড়া একটি ঐতিহাসিক স্থান। আমাদের প্রাণের দাবী, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করার মাধ্যমে ম্যানেজার বাংলোকে যাদুঘর ঘোষণা করা হোক। আমরা এখনও আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর। ফলে ঐতিহাসিক এই স্থানটিকেও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তিনি’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর