সাতাত্তরেও স্বনির্ভর থাকতে আব্দুল আজিজের সংগ্রাম

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ময়মনসিংহ, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 16:44:19

কম করে হলেও ১০০ শতাংশ জমির মালিক তিনি। তার তিন ছেলের সবাই কর্মক্ষম। ফলে অভাবের বৃত্তে বন্দী নয় তাদের জীবন।

তবুও জীবনের গোধূলি বেলায় এসে আব্দুল আজিজ (৭৭) সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলেদের সংসারে বোঝা হবেন না। নিজের জীবনের ব্যয় বহন করবেন নিজেই। জীবনকে তিনি দেখেন জীবনের নিয়মেই।

আর তাই কিনা বার্ধক্যে জর্জরিত জীবনের বদলে সংগ্রামমুখর এক জীবনকেই বেছে নিয়েছেন আব্দুল আজিজ। জীবনের শেষ বসন্তে চলছে তার অন্যরকম এক জীবন সংগ্রাম। বয়স ও বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় করে নিজে উপার্জন করছেন।

আট বছর আগে কিনেছেন ওজন মাপার একটি মেশিন। সেই মেশিনই টেনে নিয়ে যাচ্ছে এই বয়োবৃদ্ধকে। নিজের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ নিয়ে দিন শেষে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন। এ যেন অন্য রকম এক অনুভূতি!

জীবনের যে সময়টাতে পরিবার আর নাতিপুতিদের নিয়ে হেসে খেলে সময় কাটানোর কথা, সেই সময়টাতে কেন সংগ্রামী হলেন, এমন প্রশ্ন ছিল আব্দুল আজিজের কাছে। সোমবার (১ এপ্রিল) বিকালে শহরের ব্রক্ষপুত্র নদের কাছে জয়নুল উদ্যানে নানা ঘাটে বাঁক নেওয়া জীবন সংগ্রামের বয়ান তুলে ধরলেন বার্তা২৪.কমের কাছে।

তার আগে শুনিয়ে দিলেন নিজের বর্তমান হালহকিকত। জানান, নিজের খরচ নিজে চালাতেই ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে বসেন এ উদ্যানে। শহরের কাটাখালি এলাকায় টিনসেড ঘরের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকেন আব্দুল আজিজ।

তার ভাষ্য, তিনি এ বয়সটাতে ছেলেদের দিকে চেয়ে থাকতে চান না, তাদের কাছে হাত পাততে চান না। সম্মান নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে চান। আর এজন্য এ বয়সেও উপার্জন করছেন; আর এতে অন্যরকম এক সুখ আছে।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়ায় স্থায়ী আবাস আব্দুল আজিজের। সেই সময়ে অষ্টম শ্রেণী পাস করা আব্দুল আজিজ এক সময় চালাতেন ওষুধের দোকান। এরপর একটি বইয়ের দোকান ছিল রাজধানীর চকবাজারে। লাভবান হতে পারেননি, তবে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এক টুকরো জমিও হাতছাড়া করেননি। অভাব অনটনে থেকেও টিকিয়ে রেখেছেন জমিটুকু।

আব্দুল আজিজ জানান, নিজের ওই সামান্য আয়ের টাকায় তিন ছেলেকে বড় করেছেন। তাদের একজন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক, আরেকজন কৃষিকাজ ও অন্যজন একটি মিলে কাজ করেন। চার মেয়ের তিনজনকে বিয়ে দিয়েছেন।

ছেলেরা চান, তাদের বাবা এই বয়সে বাড়ির বাইরে না থেকে তাদের সঙ্গেই থাকুক। তাকে দেখভাল-খরচপাতি ছেলেরা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এক্ষেত্রে যেন বড্ড বেশি অভিমানী আব্দুল আজিজ।

তার মতে, আজকে ছেলের সংসারে থাকলে হয়তো একদিন মনের অজান্তেই কটু কথা শুনতে হতে পারে। আমার সন্তান ও বৌমাদের সঙ্গে আমি কখনোই তিক্ততা চাই না। মধুর সম্পর্কটাই শেষদিন পর্যন্ত ধরে রাখতে চাই। এজন্য এখনো নিজে উপার্জন করছি। আর এই উপার্জনের মধ্যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দু’টোই আছে তার।

এমন কথা বলেই খিলখিল করে হেসে ওঠেন জীবন সচেতন এই মানুষটি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর