মেয়েকে শিক্ষিত করতে মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম

ঢাকা, জাতীয়

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:04:46

রমনা পার্কের সামনের ফুট ওভার ব্রিজের নিচে বসে কাজে ব্যস্ত হোসনে আরা। এক মনে তৈরি করে চলেছেন, ফুলের টায়রা। হোসেন আরার ফুলের টায়রা পরে অনেকেই সাজবেন নিজ রূপে। কিন্তু ফুল বিক্রি কাজ নয় হোসনে আরার।

হোসনে আরা নেত্রকোনার মেয়ে। বয়স আনুমানিক ৩৫। চার ভাইবোনের মধ্যে ছোট তিনি। বিয়ে হয়েছিলো নেত্রকোনার দিন মজুর মোজাম্মেলের সাথে। বিয়ের বছর খানেকের মধ্যে ঘর আলো করে আসে ফুটফুটে মালেকা। হোসনে আরার এক মাত্র সন্তান মালেকা। মেয়েকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন হোসনে আরার।

শরীরে শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও একমাত্র সন্তানকে পড়ালেখা শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চান সমাজে। কিন্তু বিধিবাম! দারিদ্র্যতার কষাঘাতে অতিষ্ঠ জীবন। সন্তানের মুখে খাবারও দিতে পারে না অনেক সময়। কাজের সন্ধানে হোসেন আরা শাশুড়ির সাথে আসেন ঢাকায়।

হোসনে আরার আশ্রয় হয়ে ওঠে হাইকোর্টের মাজার। শাশুড়ির সাথে বাসা বাড়িতে কাজ শুরু করেন। ছয়মাসে একবার নেত্রকোনা যান মেয়েকে দেখতে। বাসা বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পান তা পাঠিয়ে দেন মেয়ের লেখা পড়ার জন্য। বড় হতে থাকে মালেকা। সময়ের সাথে সাথেই বাড়ে মালেকার পড়ালেখার খরচ।

মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হলে বাড়াতে হবে আয়। সামনে কেবলই অন্ধকার হোসেনে আরার। কয়েক বছর আগে নতুন আয়ের পথ খুঁজে পান হোসনে আরা। ভোর থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত বিভিন্ন বাসায় কাজ করেন তিনি। বাকি সময় শাহবাগ এলাকায় ফুল বিক্রি করেন মালেকার মা। উৎসব পার্বণে তৈরি করেন ফুলের টায়রা। বিক্রি করে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে মালেকার খরচ।

মালেকা এখন নেত্রকোনার একটি স্কুলে ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। এসএসসি পাশের পর কলেজে ভর্তি করতে হবে মালেকাকে। আর তাই টাকা জোগাড় করছেন প্রতিদিন।

হোসনে আরা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'একটাই মাইয়া আমার। ভোর থেকে বাসা বাড়িতে কাজ করি। আমার সাথে যা কাজ করেন তারা কাজের পর আরাম করে। কিন্তু আমার শুধু মনে হয় মাইয়াডার কথা। ওর স্কুলের বেতন, মাস্টারের খরচ, জামা-কাপড় কতো টাকার ব্যাপার। আমিক চাই না আমার মাইয়াও মানুষের বাসায় কাজ করুক। পড়ালেখা শিখে মালেকা চাকরি করব, এই একটাই স্বপ্নতো আমার। রক্ত বেইচা হলেও মাইয়ারে পড়ামু। আপনাগো মতো শিক্ষিত বানামু।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর