ব্যাংকার হতে চান সেই রাফিয়া

, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা ২৪.কম | 2023-12-25 17:16:22

নাম রাফিয়া আফরিন কানিজ। বয়স মাত্র ১০ বছর। এই ছোট্ট রাফিয়ার একটি হাসির ঝিলিক পুরো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মনকে আন্দোলিত করে। মুহূর্তে ভাইরাল হতে শুরু করে তার সেই হাসির ছবি। এটি তার জন্য কাল হয়ে বসেছে। বন্ধ হয়ে গেছে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ঝিনুক বিক্রি। পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার পথে। উল্টো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তার পরিবার।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাবা আব্দুল মালেক নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে পড়ে কোমরে আঘাত পান। এরপর থেকে তিনি কোন কাজ করতে পারেন না। পরিবারে চার ভাই-বোনের মধ্যে রাফিয়া মেজ। বাবার এমন পরিস্থিতিতে এ বয়সে দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র নগরী কক্সবাজারের ঝিনুক বিক্রেতা রাফিয়া। কিন্তু তার চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।

 

এত অল্প বয়সে রাফিয়াকে নিয়তি বাধ্য করেছে সংসারের ভার নিজ কাঁধে তুলে নিতে। তাই তো অবুঝ এ শিশু কন্যা স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি ঝিনুক বিক্রি করে সৈকতের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে। আর সে আয় দিয়ে ভালোই চলছিল রাফিয়াদের সংসার।

তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে রাফিয়া ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ফেসবুকে কেউ একজন রাফিয়ার একটি ছবি আপলোড করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী রাফিয়াকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে হলিউড বলিউডের বিখ্যাত সুন্দরী নায়িকাদের।

ফেসবুক ব্যবহারকারী এসব নায়িকাদের সঙ্গে রাফিয়ার ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখছেন, কে বেশি সুন্দর? কক্সবাজারের ঝিনুক বিক্রেতা রাফিয়া না ইন্ডিয়ার ক্যাটরিনা? অথবা কার হাসি বেশি সুন্দর ইত্যাদি।

আর এটাই রাফিয়া ও তার পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধ হয়েছে ঝিনুক ব্যবসা ছেড়ে রাফিয়া বাড়িতে বসে থাকতে। রাফিয়া এখন ঘরবন্দি।

কক্সবাজার সদরের ঝিলংঝা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ঝিরঝিরিপাড়ার দরিদ্র আবদুল করিমের কন্যা রাফিয়া। বাবা দিনমজুর, মা রহিমা বেগম গৃহিণী।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে কলাতলীর ঝিরঝিরি পাড়ায় তার বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের কথা হয় বার্তা ২৪.কমের।

রাফিয়া বলেন, ‘বাবার কষ্ট দেখে পড়াশোনার পাশাপাশি ঝিনুক বিক্রি করতাম। প্রতিদিন ঝিনুক বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০টাকা আয় হতো। সেই টাকা দিয়ে চলত পড়া-লেখার খরচ ও পরিবারের খরচ। কিন্তু এলাকার লোকজনের পাশাপাশি বাইরে গেলে মানুষ আমাকে নিয়ে নানান কথা বলে তাই বাড়ি থেকে বের হতে পারি না।’

রাফিয়া বলেন, ‘আমি ঘরবন্দি হয়ে নয় অন্য ১০ জনের মত আবারো পড়ালেখা করতে চাই। পড়াশোনা করে বড় হয়ে একজন ব্যাংকার হতে চাই। আমি চাইনা আমার পড়ালেখা বন্ধ হোক।’

রাফিয়া আরও বলেন, ‘ফেসবুক কি আমি বুঝিনা চিনিনা। তবে সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই আমাকে আর আমার পরিবারকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন।’

রাফিয়ার চাচা মহিউদ্দীন বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘কোন এক পর্যটক রাফিয়ার ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এ কারণে রাফিয়া এখন স্কুলে যেতে পারে না। ঝিনুক নিতে যেতে পারে না সৈকতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাফিয়াকে সবাই চিনে ফেলায় তার সঙ্গে সেলফিতে মেতে উঠে। অপহরণ অথবা অজানা কোনো এক ভয়ে দিন পার করছেন রাফিয়ার পরিবার। তাই তাকে আপাতত ঘরবন্দী থাকতে হচ্ছে বলেও জানান তার চাচা।

রাফিয়ার বাবা আব্দুল মালেক বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘ঝিনুক বিক্রির সময় একজন আমার মেয়ের ছবি তুলেছে। কিন্তু তা ফেসবুকে দেয়ায় এখন সামাজিক ও আর্থিকভাবে চরম সংকটে আমরা। মেয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। পাশাপাশি স্কুলে যেতেও ভয় পাচ্ছে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

আরও পড়ুন: ভাইরালের পর গৃহবন্দী সংগ্রামী রাফিয়া

এ সম্পর্কিত আরও খবর