সড়ক দুর্ঘটনা: চালকরা এতো বেপরোয়া কেন?

বিবিধ, জাতীয়

মুজাহিদুল ইসলাম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2024-01-17 20:59:20

সড়কে মৃত্যুর ‍মিছিল। ঘাতক বাস কেড়ে নিল পথচারীর প্রাণ। থামছেই না মৃত্যুর মিছিল। এই কথাগুলোই প্রতিনিয়তই খবরের শিরোনাম হচ্ছে। এরপর শুরু হয় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, রাজপথ অবরোধ। তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকার। কিছুদিন যেতেই হ-য-ব-র-ল ট্রাফিক ব্যবস্থা। অবস্থা যা তাই থেকে যায়।

সড়কে নামলেই শুরু হয় অসুস্থ প্রতিযোগিতা। চালক যেমন ব্যস্ত ওভারটেকিং করে আগে যাত্রী উঠাতে, একইভাবে যাত্রী কিংবা পথচারী নিয়ম সিগনালের তোয়াক্কা না করে হাত ‍তুলে দৌড় দিচ্ছেন চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়েই। ফলাফল, প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানী যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দুটি বাসের রেষারেষিতে নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী।

তার মৃত্যুতে আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীসহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। দাবি একটাই নিরাপদ সড়ক চাই।

রাজীব, দিয়া, মিমের ধারাবাহিকতায় আবরার, একের পর এক ঝরছে তাজা প্রাণ। এছাড়া সারাদেশে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

 

চালকরা কেন এতো বেপরোয়া? পথচারীইবা কতটা সচেতন? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজেছে বার্তা২৪.কম।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্স ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বার্তা২৪.কমকে জানান, দুর্ঘটনার বড় কারণ হলো একই কোম্পানির অনেক বাসের একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা। আবার ঢাকা শহরে ফুটপাতগুলো চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় মানুষজন রাস্তায় নেমে পড়েন। এতে গাড়ির সঙ্গে মানুষের সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

করণীয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমস্ত বাসগুলোকে একীভূত করতে হবে। চালকদের মাসিক বেতন ভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে যাতে যাত্রী তোলার বিষয়ে তাড়াহুড়া না থাকে। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা যেন লাইসেন্স নেয় সে বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে হবে। যাতে করে চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা না থাকে। একইসঙ্গে যারা পথচারী তাদেরকেও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার, জেব্রা ক্রসিং, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলতে অভ্যস্ত করতে হবে। তবেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।’

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহনের চালক মো. ইকবাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার ১২ আনা হয় পথচারীর কারণে। ফুটপাত ছেড়ে সড়কে যেসব লোক হাঁটে তাদের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের কোন কারণ নেই। আমাদের কিছু ভুল হয়, কিছু দোষও আছে। তবে দুর্ঘটনার পিছনে ১২ আনায় দায়ী পথচারী। তার দায় ড্রাইভারের না।’

‘অনেক কোম্পানির গাড়িতে টার্গেট দেয়া হয়। যে, এত টাকা তুলে দিতে হবে। তখন একই রুটের বা একই কোম্পানির দুটি গাড়ি একত্রে হলে ওভারটেকিং করে, যাত্রী উঠানোর জন্য প্রতিযোগিতা করে।’ এসব কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান ইকবাল।

শীতল পরিবহনের চালক আসাদুল ইসলাম জানান, পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও নিচ দিয়ে সড়ক পার হয়। পথচারীদের সমস্যা আছে, চালকেরও অসচেতনতা রয়েছে। চালকরা ইচ্ছে করে পিঁপড়াও মারে না। হাজার হাজার গাড়ি চলে। তবে কিছু চালক আছে যাদের অভিজ্ঞতা কম। অভিজ্ঞতা ও লাইসেন্স ছাড়াই মালিকরা ছোট ছোট বাচ্চাদের স্টেয়ারিয়ে বসিয়ে দিচ্ছেন। এগুলো বন্ধ করতে হবে।

ট্রাফিক সার্জেন্ট শফিউল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনায় ড্রাইভার এবং পথচারী উভয়েরই সচেতনতার অভাব রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ড্রাইভারদের সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষিত ড্রাইভার ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো বা দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।’

ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চালকদের মধ্যে এক ধরনের ট্রেন্ড হয়েছে যে আগে গেলে আগে যাত্রী উঠানো যাবে। বেশি যাত্রী পাওয়া যাবে। বেতনের বাইরে বাড়তি আয় করা যাবে। ঢাকায় যে পরিমাণ জনগণের বসবাস ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মী তার তুলনায় সীমিত। তাই শুধুমাত্র ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে চালকদের নিয়ন্ত্রণ কঠিন। তাই বিআরটিএ, সড়ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি চালক ও পথচারীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর