নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সাত দিনের জন্য স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আট দফা দাবি আদায়ে আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা এসএম মামুন বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার (২০ মার্চ) বিকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক বসেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থীরা। এই সময়ের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হলে ফের রাজপথে নামবেন বলেও এ সময় ঘোষণা দেন তারা।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা যে আট দফা দাবি দিয়েছে সেগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। এসব দাবির সঙ্গে আমরাও একমত। তারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নের শর্তে আন্দোলন স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। আমরা এই সময়ের মধ্যে তাদের সব দাবি বাস্তবায়নের যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
এর আগে ডিএমপির কয়েকটি থানার পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিকালের মধ্যেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা।
তবে ভাটারা থানার ওসি (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রগতি সরণি থেকে বিইউপিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ধীরে ধীরে এই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।
রায় সাহেব কোতোয়ালী থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, রায় সাহেব বাজারে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা অবস্থান ছেড়ে দিয়েছেন। এই এলাকায় যানবাহন চলছে।
শাহবাগ এসআই মফিজুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীরা পৌনে ৪টার দিকে শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিয়েছেন। এখন শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে অবরোধ উঠে গেছে। এখন এই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
শেরে বাংলা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন, সোবহানবাগ ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান থেকে সরে গেছেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। ফলে মিরপুর রোডের স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে।
শাহবাগে অবরোধ স্থগিতের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আট দফা দাবি বাস্তবায়নে আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, শুধু আশ্বাস দিলে হবে না, আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লিখিত দিতে হবে। এর আগেও আমাদের অনেক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। সড়কে মানুষ মরছেই।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় সুপ্রভাত বাসের চাপায় মারা যান বিইউপির ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী। তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আরাফাত আহমেদের বড় ছেলে। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীতে গত রোববার (১৭ মার্চ) শুরু হয়েছে পঞ্চমবারের মতো ট্রাফিক সপ্তাহ। এর মধ্যেই বাস চাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
আবরারের প্রাণহানির প্রতিবাদ, বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে ওই দিন সকাল থেকেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল ফটকে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার দ্বিতীয় দিনে এ আন্দোলন ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর শাহবাগ, রায়সাহেব বাজার ধানমন্ডি, মিপুর, উত্তরা, ফার্মগেট, প্রগতি সরণিসহ একাধিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভে রাজধানী উত্তাল হয়ে ওঠে।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে পুরো রাজধানী কার্যত অচল হয়ে পড়ে। তীব্র যানজট ও পরিবহন সংকট দেখা দেয়, যার রেশ এখন কাটেনি। ফলে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
আরও পড়ুন: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবরোধ
আরও পড়ুন: মেয়র ও ডিএমপি কমিশনারের কথায় আশ্বস্ত হলেন না শিক্ষার্থীরা
আরও পড়ুন: রাস্তায় লাইসেন্স চেক করছেন শিক্ষার্থীরা