গ্যাসের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 19:24:28

চলতি অর্থবছরে আরেক দফা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানির আয়োজন করে। গত ১১ মার্চ থেকে তিনদিন ব্যাপী এ গণশুনানি চলে।

এ গণশুনানিতে বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির পক্ষ হতে বিইআরসি’র কাছে ১০২ শতাংশ হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর পক্ষ হতে বলা হয় চড়া দরে এলএনজি আমদানির কথা।

গ্যাসের মূ্ল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের শুরু থেকেই ভোক্তাদের পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতা করা হচ্ছে। ভোক্তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হচ্ছে, বিইআরসি নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করে গ্যাসের মূল বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে গণশুনানির আয়োজন করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে নাগরিক জীবনের অর্থনৈতিক দিকে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে।

এদিকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে একই সুরে কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিইআরসি আইন অনুযায়ী যেকোনো অর্থবছরে একবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে পারে। চলতি বছরে বিইআরসি ইতোমধ্যে গ্যাসের দাম গত বছরের অক্টোবর মাসে বৃদ্ধি করে ফেলেছে। তাই আইন অনুযায়ী বিইআরসি’র গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে দুইটি দিক আছে। একটি হল আইনগত অন্যটি যৌক্তিকতা। বিইআরসি চলতি অর্থবছরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে ইতোমধ্যে আরেক দফা দাম বাড়ানোর সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে। তাই এখন যে দাম বাড়ানোর বিষয়ে কথা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ বে-আইনি। এ বিষয়ে আমরা একটি রিট করেছি। রিটের শুনানি শেষ হয়েছে, যে কোনো সময় আদালত এ বিষয়ে রায় দিবেন।

তিনি বলেন, আর যদি এখন যৌক্তিকতার প্রসঙ্গে বলি তাহলে প্রথম কথা হচ্ছে যেটি সেটি হল, বিইআরসি'র কাজ হচ্ছে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা। অক্টোবর মাসে বিইআরসি যে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল তাও অযৌক্তিক ছিল। এখন যদি আবার দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে বিইআরসির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয় বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, বিইআরসি গণশুনানির নামে প্রতারণা করে এলএনজি ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। এই ক্ষেত্রে আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জগণের ওপর আবারও বোঝা চাপিয়ে দেওয়া চেষ্টা করছে। যার ফলে জনসাধারণের জীবনযাপনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

তেল-গ্যাস–খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এছাড়া বাংলাদেশে যথেষ্ট গ্যাস সম্পদ আছে। তাহলে কেন গ্যাসের আবার দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়েছে? আসলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এ দাম বৃদ্ধি করার পাঁয়তারা।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে বিইআরসি যদি গ্যাসের ১০ টা দাম বৃদ্ধি করে, তাহলে এর প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে ৫০ টাকার। বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। যা জনগণের জীবনযাপনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে। তাই কোনোভাবেই গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না।

এ বিষয়ে বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, গ্যাস এমন একটি উপাদান যার দাম বাড়লে প্রায় সকল জিনিসের দাম বেড়ে যায়। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়, দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। দুর্ভাগ্যের বিষয় সমুদ্র বিজয়ের ঢাক ঢোল পিটালেও সেখানে গ্যাস উত্তোলনের কোন উদ্যোগ সরকার নেয়নি। কিন্তু ভারত-মায়ানমার সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে। কিন্তু আমরা তা না করে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের ওপর চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছি।

তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে আতঙ্কিত না হতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিইআরসি।

এ বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেছেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানি যত বেশি দাম বাড়ানোর আবেদন করুক না কেন, যৌক্তিক পর্যায়ে তা বিবেচনা করা হবে। কাজেই এ নিয়ে জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর