শিক্ষার্থীদের সহায়তায় অসহায় নারীর চিকিৎসা

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 07:29:31

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) হাসপাতালের পশ্চিম গেট। গেটের বাম পাশে চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ, এর ডানে বদনাশাহ মাজার। সকাল থেকে রাত অবধি রোগী, স্বজন আর পথচারীদের ভিড়ে সরগরম থাকে এর প্রবেশমুখ।

রোববার (১০মার্চ) প্রতিদিনের মতো পথচারী আর সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের আনাগোনা রয়েছে। এদিকে গত দুদিন ধরে হাসপাতালের ওই গেটে একজন অসুস্থ নারী পড়েছিলেন ময়লা-আর্বজনার পাশে। একটি পুরনো পোস্টার ছিল তার শরীরের ওপর। পোকা-মাকড় মুখমণ্ডল জুড়ে ভন ভন করলেও সামান্য শক্তিটুকু নেই তাড়ানোর।

অন্যান্য দিনের মতো ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে আড্ডা আর খুনসুটিতে অবসর সময় কাটান প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদ বিন ইকবাল। সবার চোখ আড়াল হলেও আসাদ ও তার সহপাঠীদের নজরে আসে ওই অসুস্থ নারীর নীরব আর্তনাদ আর গোঙানির শব্দ।

জরাজীর্ণ ময়লার ড্রেনের পাশে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালের ভর্তির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান তারা। শত অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে হাসপাতালে ভর্তি নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।

অসহায় নারীর শারীরিক অবস্থা নাড়া দেয় আসাদকে। ক্লাস শেষে সহপাঠীদের নিয়ে পুলিশের তাৎক্ষণিক সেবা ৯৯৯, সংশ্লিষ্ট পাঁচলাইশ এবং চকবাজার থানায় ফোন করেন। এর মধ্যেই পরিবারের খোঁজে নেমে পড়েন তারা। খুঁজে বের করা হয় বড় ছেলে নুরুন নবীকে। শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসা দেখে অনেক পথচারী তাদের সাথে যুক্ত হন, অনেকেই অসুস্থ নারীকে ফল দিয়ে সাহায্য করেন।

আসাদ ও তার বন্ধুরা ট্রলি করে হাসপাতালের নিয়ে যান অসুস্থ ওেই নারীকে। সেই সঙ্গে তার সুচিকিৎসার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করেন তারা।



এদিকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। থানার উপপরিদর্শক মো.ইলিয়াছ মিঞা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ ফোন করে হাসপাতালের গেটে একজন অসুস্থ মহিলা পড়ে আছে বলে জানায়। যেহেতু হাসপাতালের গেটের ভেতরে একজন নারী অবস্থান করছে, আমরা হাসপাতালে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সহায়তা প্রদান করব। এরপরও কোনো সাহায্যর প্রয়োজন হলে থানার পক্ষ থেকে করা হবে।’

আসাদ ও তার সহপাঠীরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকালে আমরা হাসপাতালে ভর্তির জন্য অনেকবার অনুরোধ করলেও তারা ভর্তি করায়নি। পরে আমরা বাধ্য হয়েই পুলিশের সাথে যোগাযোগ করি। উনারা আমাদের ভর্তির বিষয়ে সহায়তা করেছেন।

তারা আরও বলেন, মহিলাটিকে দেখে আমাদের মনে হয়েছে, উনাকে হাসপাতাল থেকে বের করে এখানে এনে ফেলা রাখা হয়েছে। তাই আমরা হাসপাতালের সকলের সাথে কথা বলি। তারা আমাদের কোনো ধরনের সহায়তা করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসুস্থ ওই মহিলার নাম মরিয়ম বেগম (৫০)। নগরীর হালিশহর থানার সবুজবাগ স্থানের আই ব্লকে বসবাস করতেন। তিনি আবদুস শুক্কুরের স্ত্রী। তার স্বামী দুটি বিয়ে করেন। মরিয়ম প্রথম স্ত্রী। মরিয়মের দু পায়ে ক্ষতের চিহ্ন দেখা যায়।

মরিয়মের বড় ছেলে নুরুন নবী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিনি বাসায় কম থাকেন, মাজারে থাকেন। মা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন। গত দশদিন থেকে শুনতে পাই তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। এখন খবর পেয়ে হাসপাতালে আসলাম।’

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অসুস্থ মরিয়ম বেগমকে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর