দেশের উন্নয়নে নারী-পুরুষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 18:44:41

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শুধু আইন করলে সহিংসতা অথবা বৈষম্য দূর হবে না। এজন্য সমাজের সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে দরকার বলে আমি মনে করি। এক্ষেত্রে আমাদের সকলের মা-বোনেরা যারা আছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন এবং নারী পুরুষ সকলেই এক হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ একটা কথা মনে রাখতে হবে যে একটা সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয় তাহলে সেই সমাজের যেখানে অর্ধেক নারী তাদেরকে বাদ রেখে গড়ে উঠতে পারে না। কাজেই সেই ক্ষেত্রে সকলকে এক হয়ে কাজ করা এটাই সবথেকে বেশি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার (৯ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমাজকে গড়ে তুলতে হলে সকলেরই একসাথে কাজ করা দরকার। দেশকে কল্যাণময় করতে গেলে নারী পুরুষের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। এছাড়া আমাদের কন্যাশিশু তারা যেন কখনো বৈষম্যের শিকার না হয়। ইতোমধ্যে এই সচেতনতা আমাদের দেশে এসে গেছে। কিন্তু আরও ভালোভাবে প্রচার দরকার।’

ইসলাম ধর্মে নারীর অবদানের কথা স্মরণ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘সব সময় আমি জানি আমাদের নারী সমাজ বৈষম্যর শিকার হয়েছে। একটা সময় বলা হত যে নারীরা আবার কী করবে? ঘরে বসে ভাত রান্না করবে আর সন্তান জন্ম দেবে, এইতো তাদের কাজ। এর বেশি আর কী করবে। এবং মাঝে মাঝে আমরা দেখি আমাদের ইসলাম ধর্মের নামে কেউ কেউ এই নারীদেরকে ঘরে বন্দী করে রাখার কথা বলে। শিক্ষা গ্রহণ করার বিরোধিতা করবে। তাদের উদ্দেশ্যে এইটুকু বলতে চাই, যে ইসলাম ধর্ম এমন একটি ধর্ম যে ধর্মটা আমাদের নবী (সা.) প্রবর্তন করে যান। কিন্তু তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল একজন নারী যিনি ব্যবসা করতেন, বাণিজ্য করতেন, তার অধীনে চাকরি করেই তিনি জীবন শুরু করেছিলেন। এবং তার সততার জন্য বিবি খাদিজা তাকে বিবাহ করেন। এবং নবী (সা.) যখন নব্যুওয়াত পান এবং ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন তখন প্রথম ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন বিবি খাদিজা। সে সময় কিন্তু কোনো পুরুষ সাহস করে এগিয়ে আসে নাই।’


ছবি: ফোকাস বাংলা

বাংলাদেশে নারীর প্রতি বৈষম্যর চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের দেশে যেটা আমরা সবসময় দেখেছি সেটা হল নারীর প্রতি বৈষম্য। পাকিস্তান আমলে যে আইন ছিল, যেমন আইন ছিল যে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কোনো নারী প্রার্থী হতে পারবে না। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বাতিল করে দিয়ে সেখানে নারীদের সুযোগ করে দেন। এবং প্রথম যিনি যে জুডিশিয়াল পরীক্ষায় পাস করে চাকরি পেয়েছিলেন নাজমুন আরা। কী সৌভাগ্য আমার, আমি যখন ৯৬ সালে সরকারে আসি তখন দেখি আমাদের উচ্চ আদালতে একজন নারী জজ নাই। তখন তিনি ডিস্ট্রিক জজ ছিলেন। আমি রাষ্ট্রপতিকে বলে তাকেই আমরা প্রথম হাইকোর্টে জজ হিসেবে নিয়ে আসি।’

‘এরপর জুডিশিয়ারিতে এখন অনেক নারী জজের সুযোগ হয়েছে, অ্যপিলেট ডিভিশনেও আছে। কিন্তু একসময় এ জায়গাটা নিষিদ্ধই ছিল।’

আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড কোথাও কিন্তু নারীদের স্থান ছিল না। এখন সবজায়গায় আমাদের নারীদের স্থান আছে। প্রত্যেকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে। এবং প্রথম মেজর জেনারেল আমাদের সময় একজন নারীকে আমরা করতে পারলাম। এখন আমাদের মেয়েরা বিমানে তো পাইলট আছেই, আমাদের এয়ার ফোর্সের নারী পাইলট আছে। কাজেই তারা ভবিষ্যতে তারা ফাইটার প্লেন চালাবেন। সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা।’

‘আমাদের নৌবাহিনীতে সেখানেও আজকে আমার মেয়েরা সবথেকে ভালো কাজ করে। একসময় সেনাবাহিনীতে মহিলাদের কোনো জায়গা ছিল না। আমি ৯৬ সালে সরকারে এসে সব চালু করে দেই এবং আমাদের বর্ডার গার্ডেও নারীরা আছে। শুধু তাই না আমাদের কোন মহিলা সচিব ছিল না। সর্বপ্রথম মহিলা সচিব, জেলায় ডিসির পদ, এসপির পদ প্রত্যেকটা জায়গায় একদম জোর করে আলাদা আলাদা ভাবে তাদের পদায়ন করতে হয়। যখন আমি প্রথম মহিলা এসপি নিয়োগ করব তখন অনেকে বলল মহিলা আবার এসপি হয় কীভাবে? কিন্তু আমি যখন মুন্সীগঞ্জে প্রথম মহিলা এসপি নিয়োগ করলাম প্রথমদিনেই সে একজন ডাকাত ধরে ফেলল। আমার মনে হলো আমিও বিজয়ী হলাম। আমাদের মেয়েরা এভাবে শক্তি দেখাতে পারল। কাজেই দেখা যাচ্ছে ছেলেরা যা না পারে তার থেকে মেয়েরা ভালোই পারে’ মন্তব্য করেন তিনি।


ছবি ফোকাস বাংলা

বক্তব্যে তিনি নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকার ও তার ‍গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ, পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।

এসময় ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া নিয়েও প্রতিক্রিয়া দেন শেখ হাসিনা । তিনি বলেন, ‘যে সম্মাননাই পাই না কেন সব আমার দেশের মানুষের। এবারও যে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মাননাটা পেয়েছি সেটা বাংলাদেশের সকল মা-বোন এবং বিশ্বের সকল নির্যাতিত নারীর জন্য উৎসর্গ করছি।’

শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৯ উদযাপন অনুষ্ঠানে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

অনুষ্ঠানে এ বছরের শ্রেষ্ঠ পাঁচজন ‘জয়ীতা’কে ক্রেস্ট, সনদ ও সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন্নাহার, ইউএনডিপির বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি মিয়েছেবো, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর