লাশের মিছিলেও টনক নড়ছে না কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের!

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 00:20:03

বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লাশের মিছিল দেখেও টনক নড়ছে না কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন এবং গত ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ৭১ জন নিহত হন। ঘটনার পর বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা জানান, মূলত রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় ওই দুই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৯৫ জন নিহত হয়েছন।

জানা গেছে, নিমতলীর ঘটনার পর পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় অবৈধ রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম অপসারণে অভিযান চালায় তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাধায় সেটা বন্ধ করতে হয়। ফলে ওই এলাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্য ও প্লাস্টিকের কারখানা এবং গুদাম অপসারণ সম্ভব হয়নি। আর এ কারণেই চকবাজারে রাসায়নিক গুদামের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা গেছে, চকবাজার ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্য ও প্লাস্টিকের কারখানা এবং গুদাম অপসারণের জন্য বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে ডিএসসিসি। এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চলানো হচ্ছে। তিন দিনের অভিযানে মোট ৪১টি রাসায়নিক দ্রব্য ও প্লাস্টিকের গুদামের ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হযেছে।

তবে ডিএসসিসি’র টাস্কফোর্সের এই অভিযানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখছেন অনেকে। টাস্কফোর্সের এই অভিযানে আবারও পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন স্থানীয় রাসায়নিক দ্রব্য ও প্লাস্টিকের ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকরা। এই তিনদিনের অভিযানের মধ্যে দুই দিনই টাস্কফোর্স সদস্যদের বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি টাস্কফোর্সের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

সরেজমিনে দেখে গেছে, রোববার (০৩ মার্চ) টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে পুরান ঢাকার শহীদনগরে রাজনারায়ণ রোডে অবৈধ প্লাস্টিকের চারটি টিন শেড কারখানা, একটি পাঁচতলা ভবনে রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের কারখানার সন্ধান পায়। টিমের সদস্যরা ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ঢাকা জেলা পরিষদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্ণা শিরীন ও সিটি করপোরেশন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হাসানকে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে ব্যবসায়ীরা। পরে লালবাগ থানা পুলিশের সহযোগিতায় তারা বের হন।

গত শনিবার বকশীবাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে একইভাবে টাস্কফোর্সের সদস্যরা অবরুদ্ধ হন। পরে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।

ওই সময় মেয়র সাংবাদিকদের জানান, তাদের উদ্দেশ্য পুরান ঢাকার নাগরিকদের বাসযোগ্য শহর উপহার দেয়া, তাদের উচ্ছেদ করা নয়। এখানেই ব্যবসা করবেন, কিন্তু মজুদ ও সরবরাহ অন্য জায়গায় করতে হবে।

এদিকে বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের কেন টনক নড়ছে না-সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এছাড়া তাদের নৈতিক দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন ভালো কথা। কিন্তু তারা তো জনগণকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারেন না। রাষ্ট্রীয় আইন মেনে তাদের ব্যবসা করতে হবে। যারা অভিযানে বাধা দিচ্ছেন, তারা মানুষ কিনা প্রশ্ন জাগে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের আর সময় দেওয়া উচিৎ হবে না। সরকার তাদের নীতিগত সহায়তা দিতে পারে। কিন্তু জনগণের টাকা দিয়ে জায়গা কিনে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদের সময় না দিয়েই সরকার এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। এমনকি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর