একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই, প্রতীক বরাদ্দের দিনও রংপুরে আসেননি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। অংশ নেননি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে। এমনকি নিজের ভোটটিও দিতে আসেননি তিনি। অসুস্থতার কারণে নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও জনগণের ভোটে জয়ী হয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান।
দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা শেষে এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। দীর্ঘ চার মাসেরও বেশি সময় পর রোববার (৩ মার্চ) দুপুর ১২টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে রংপুর সেনানিবাসে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে গাড়ি বহরে করে নগরীর সেনপাড়ার স্কাই ভিউ এবং দর্শনা আরকে রোডে তার নিজ বাসভবন পল্লী নিবাসে যান। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করে সেখান থেকে চলে আসেন নগরীর বিলাস বহুল তিন তারকা হোটেল গ্র্যান্ড প্যালেসে। এ সময় এরশাদকে ফুলেল শুভেচ্ছা আর মিছিল-স্লোগানে বরণ করে নেন দলের নেতা-কর্মীরা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হবার পর এটিই রংপুরে এরশাদের চারদিনের ব্যক্তিগত প্রথম সফর।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনের এমপি। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। তাই তার আগমনকে ঘিরে সকাল ১০টা থেকেই সংবাদ সংগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন গণমাধ্যম কর্মীরা। অপেক্ষার প্রায় সোয়া ৩ ঘণ্টা পর গাড়ি বহরে করে আসেন এরশাদ। তাকে হুইল চেয়ারে করে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়া হয় বিলাস বহুল তিন তারকা হোটেল গ্রান্ড প্যালেসে।
এ সময় এরশাদের সঙ্গে ছিলেন- জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) মো. খালেদ আখতার, এরশাদের ছেলে এরিখ এরশাদ।
অন্যান্যদের মধ্যে রংপুর সিটি করপোরেশন মেয়র ও রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এইচএম ইয়াসির, জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, যুগ্ম সাধারণ হাজী আব্দুর রাজ্জাকসহ জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সকাল থেকে গ্রান্ড প্যালেসের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা সাক্ষাৎকার নিতে এগিয়ে গেলেও কথা বলেননি এরশাদ। এতে হতাশ হন সাংবাদিকরা। আর সেই হতাশা কাটাতে এরশাদের পক্ষে কথা বলেন দলের মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থানসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
আগামীকাল সোমবার (৪ মার্চ) ও মঙ্গলবার (৫ মার্চ) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ব্যক্তিগত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। বুধবার (৬ মার্চ) বিকেল ৪টায় এরশাদ রংপুর সেনানিবাস থেকে হেলিকপ্টার যোগে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছেন পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর রংপুর সদরের লাহিড়ীরহাট মোড়ে জাতীয় যুব সংহতির সভায় অংশ নিয়েছিলেন এরশাদ। সেই সভাতে তিনি নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে রংপুরবাসীর কাছে ভোট চেয়েছিলেন। এরপর তিনি রংপুর থেকে ঢাকায় ফিরে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণাসহ নিজের ভোট প্রদানেও রংপুরে আসেননি। আজ দীর্ঘ চার মাস দুই দিন পর রংপুরে আসেন জাপা চেয়ারম্যান।