ঐতিহাসিক ডাকবাংলোটি এখন মাদকসেবীদের আড্ডাখানা

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 00:49:25

প্রায় দুই যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রাজশাহী জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়ায় অবস্থিত ডাকবাংলোটি স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।

বখাটেরা এখানে প্রতিদিন নিয়ম করে অসামাজিক কার্যকলাপ ও জুয়ার আসর বসাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী এ বিষয়ে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুঠিয়া উপজেলার ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে ও এক সময়ের খরস্রোতা নদী মূসাখাঁ তীরে প্রায় দেড় একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় ডাকবাংলোটি। পুঠিয়ার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে আসা পর্যটকরা এখানে নিয়ম মেনে অবস্থান করতেন।

তবে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় স্বাধীনতার কয়েক বছর পর থেকে এখানে অতিথিরা অবস্থান করা বন্ধ করে দেন। পরে নামে মাত্র দুই বার সংস্কার করা হলেও গত ২৫ বছর ধরে ঐতিহাসিক ডাকবাংলোটির দিকে কারও নজর নেই।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলোর চারপাশে ঝোপঝাড়। চার চালা টিনের একটি অতিথিশালার দরজা-জানালা তালাবদ্ধ। পাশে দু’টি আবাসিক ভবনে উপরের চালা, দরজা জানালা নষ্ট হয়ে পড়েছে। ডাকবাংলো বলতে শুধু এখন ভবনের চারপাশের দেয়াল!

তবে কোনো কোনো দেয়ালের বেশির ভাগ ইট কে বা কারা যেন খুলে নিয়ে গেছে। ভবনের চারপাশে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের বোতল ও মাদক গ্রহণের সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। যা থেকে প্রকট গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেখানে গিয়ে দরজা-জানালা নষ্ট হওয়া একটি ঘরে দেখা গেল ৬/৭ জনের জুয়ার আড্ডা।

জানতে চাইলে স্থানীয় ছবির উদ্দীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বাধীনতার পর কয়েক বছর বাংলোটিতে ব্যাপক লোকজনের সমাগম ছিল। এরপর প্রায় ২৫/২৬ বছর থেকে নজরদারির অভাবে ডাকবাংলোটি এখন ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে। এলাকার কিছু বখাটে লোকজন মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর ও বিভিন্ন অসামাজিক কাজে এটি ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, বাংলোটির সঙ্গেই ঝলমলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিনিয়ত বখাটেদের উৎপাতের শিকার হয় স্কুলের শিশু-কিশোররাও। রাস্তার পথচারীরাও হয়রানির শিকার হয় বখাটেদের। এটা সহ্যের বাইরে। আমরা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি। তবে কোনো সুফল এখনও দেখিনি।

জেলা পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল ফজল বলেন, পুঠিয়া রাজপরগনা এলাকায় বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের রাত্রী যাপনের মত কোনো বাসস্থান এখানে নেই। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর পরিষদের প্রথম অধিবেশনে বাংলোটি সংস্কার বিষয়ে জানিয়েছি। এ ছাড়া বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারাকেও কয়েকবার অবহিত করা হয়েছে, তবে তিনিও কোনো কর্ণপাত করেননি। তবে বর্তমান সাংসদ কিছু দিনের মধ্যে জরাজীর্ণ ভবনগুলো ভেঙ্গে আধুনিক মানের একটি ডাকবাংলো তৈরি করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে মৌখিকভাবে আমাদের জানিয়েছেন। আশা করছি- এবার ঐতিহাসিক এ ডাকবাংলোটি সংস্কার করা সম্ভব হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওলিউজ্জামান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। একটি ডাকবাংলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জেনেছি। এখনও পরিদর্শন করতে পারিনি। তবে দ্রুত জেলা পরিষদের মাধ্যমে বাংলোটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার কাজ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রাজশাহী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের মোবাইলে কয়েক দফা কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে এসএমএস করেও কোনো প্রতিউত্তর মেলেনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর