সময়ের সঙ্গে বাড়ছে স্বজনদের উৎকণ্ঠা

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-24 13:03:14

দিনের আলো নিভে গেছে। আলো ঝলমলে দিন এখন রাতের আঁধারে হারিয়ে গেছে। আর রাত যতটা গভীর হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গের সামনে অপেক্ষমাণ স্বজনদের উৎকণ্ঠা ততোটাই বাড়ছে। মনে একটাই আতঙ্ক, হয়ত প্রিয়জনের দগ্ধ লাশটি শেষ বারের মতো দেখা মিলবে না। শত সান্ত্বনাও যেন এখন নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতা।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সরকারি হিসাব অনুযায়ী নিহত ৭০ জনের মধ্যে ৩৭ জনকে  শনাক্ত করা গেছে। বাকিদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রয়ারি) সন্ধ্যায় ঢামেক মর্গের সামনে নিখোঁজদের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। অনেকে সারাদিন সন্ধানের পরও প্রিয় মানুষটির সন্ধান না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।

বুধবার রাতে ঘটনার সময় ওষুধ কিনতে বের হন ব্যাগের ব্যবসায়ী মো: হাসান (৩২)। রাতের ঘটনার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন দিনব্যাপী খুঁজেও কোনো সন্ধান পাননি হাসানের। তাইতো ঢামেকের মর্গের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সকল স্থানে যোগাযোগ করেও ভাইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে কেঁদে ফেলেন আনোয়ার। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমার ভাইয়ের দুটি ছোট ছোট বাচ্চা আছে। একজনের বয়স চার বছর, আরেক জনের বয়স দেড় বছর। ভাইকে না নিয়ে কিভাবে আমি ওদের সামনে যাবো।'

এদিকে ঘটনার সময় ওষুধ কিনতে বের হয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন (৩৪) নামের আরেক ব্যবসায়ী। চকবাজারে ব্যাগ ও ছাতার ব্যবসা ছিল তার। বুধবার রাতে ওষুধ কিনে স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানান, ওষুধ কেনা হয়েছে, বাচ্চাকে নিয়ে নিচে যেতে। এরই মধ্যে ফোনটি কেটে যায়। কিন্তু এখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আনোয়ারের মামাতো বোন মাহমুদা ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা সারাদিন আনোয়ারকে খুঁজেছি, পরে বিকালে একটি লাশ অনেকটা তার সঙ্গে মিলে যায়, কিন্তু আনোয়ারের একটি দাঁত ছিল না, আর লাশের দাঁত রয়েছে। তাই এটি আনোয়ারের লাশ নয় বলে নিশ্চিত হয়েছি। ঐ লাশটি অনেকটাই ঝলসে গেছে, তাই বেল্ট দেখে শনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এটি আমার ভাইয়ের লাশ নয়।’

আনোয়ারের সঙ্গে তার আরও তিন বন্ধু নাছির, হিরা ও মঞ্জু নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পারিবারিক যোগাযোগ পুন:স্থাপন বিভাগের মাঠকর্মী শাকিলা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সকাল থেকে এখন (সন্ধ্যা ৭টা) পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ৩৫টি ও ঢামেকে ৩৬টি পরিবারের লোকজন আমাদের কাছে তাদের স্বজন হারানোর কথা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে থেকে সাতজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত ৬৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন।’

এর আগে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগে চকবাজারের ওয়াহেদ ম্যানসনে। ঐ ভবনে থাকা কেমিক্যালের গোডাউন থাকার কারণেই মূলত আশপাশের ভবনগুলোতে আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর