কবি হেয়াত মামুদের প্রতি অবহেলা

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 00:19:33

অষ্টাদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবিদের একজন কাজী হেয়াত মামুদ। যাকে বাঙলা সাহিত্যের সাধক কবি বলা হতো। মধ্যযুগীয় এ কবি বেঁচে নেই। কিন্তু এখনো বেঁচে আছে তার কবিতা আর সত্য সুন্দরের সাধনা।

মোঘল শাসনামলে ১৬৯৩ সালে রংপুরের ঘোড়াঘাটের অধীন ঝাড়বিশিলা গ্রামে জন্ম নেন হেয়াত মামুদ। তার পিতা শাহ কবীর ছিলেন ঘোড়াঘাট সরকারের দেওয়ান ও কাজী। হেয়াত মামুদের যখন ত্রিশ বছর বয়স, তখন পিতাকে হারান তিনি। পিতার মৃত্যুর পর বাগদ্বার পরগনার কাজী পদে অধিষ্ঠিত হন।

ঘোড়াঘাট ওই সময়ে উত্তর বাংলার ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিদ্যা নিকেতনের তীর্থস্থান ছিল। হেয়াত মামুদ তখন ঘোড়াঘাটেই শিক্ষালাভ করেন। এতে তার যৌবন ও কৈশোরের বিরাট একটা অংশ পেরিয়ে যায় এখানে।

পিতার মতোই নীতি নৈতিকতার আদর্শ নিয়ে রাজকার্য পরিচালনা করতেন তিনি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হেয়াত মামুদ ব্যক্তি জীবনে সাধক ও সাত্ত্বিক পুরুষ ছিলেন। সুফি সাধনার প্রতি তার ছিল গভীর অনুরাগ।

আধ্যাত্মিক চেতনায় ডুবে থাকা সাধক এ কবির বহুল প্রচলিত বাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয় ‘যার বিদ্যা নাই সে জানে না ভালো মন্দ, শিরে দুই চক্ষু আছে তথাপি সে অন্ধ’ বাণীটি।

তার রচনাগুলোর মধ্যে জঙ্গনামা (১৭২৩), সর্বভেদ বাণী (১৭৩২), হিতজ্ঞান বাণী (১৭৫৩) এবং আম্বিয়া বাণী (১৭৫৮), নসীহতে কালাম, ফকির বিলাশ, শ্লোকনামা ও কেয়ামত নামা উল্লেখযোগ্য। জন্মগতভাবে রংপুরের অধিবাসী হওয়ায় কবি হেয়াত মামুদের সাহিত্যকর্মে এ অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতি-রীতির ব্যবহার রয়েছে।

তার কাব্যগ্রন্থ জঙ্গনামায় তিনি কারবালার বিষাদময় কাহিনী তুলে ধরেছেন। এটি মূলত ফারসি কাব্যের অনুসরণে রচিত। সর্বভেদ বাণী গ্রন্থে রয়েছে নীতি-নৈতিকতা কথামূলক বয়ান। হিতজ্ঞান বাণীতে রয়েছে ধর্মীয় রীতি-নীতির বিবরণ এবং আম্বিয়া বাণী গ্রন্থে হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত বিভিন্ন নবী রাসুলের জীবনী আলেখ্য তুলে ধরেছেন। কবির গ্রন্থগুলোর মধ্যে আম্বিয়া বাণী কাব্যগ্রন্থটি বড় এবং শ্রেষ্ঠ কাব্য রচনা।

শিক্ষানুরাগী এ কবি একাধারে বাংলা, ফারসি ও আরবি ভাষার পণ্ডিত ছিলেন। আড়াইশ বছর পূর্বে কবি হেয়াত মামুদের প্রয়াণ হয়েছে। এ নিয়ে কবি সাহিত্যিকদের মতবিরোধ থাকলেও অনেকেই মনে করেন ১৭৬০-৬৫ সালের কোনো এক সময় কবি ইহলোক ত্যাগ করেন।

তার মৃত্যুর পর দীর্ঘ ২শ বছর কবির মাজারটি (কবর) ছিল অবহেলিত। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমানের উদ্যোগে কবির কবরকে কেন্দ্র করে একটি গৃহ নির্মাণ করা হয়। চার দেয়ালে ঘেরা সেই গৃহটিই এখন কবির মাজার। এটি তৈরির কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেকটাই অবহেলিত কবির মাজার। যেন কবির প্রতি অবহেলা প্রকাশ করছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই।

এদিকে কয়েক দশক ধরে ওই মাজারে পালিত হয়ে আসছে কবির জন্ম ও মৃত্যু দিবস। প্রতিবছরের মতো রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কবির জন্ম ও মৃত্যু দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

ওই সব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও পীরগঞ্জ আসনের এমপি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর। দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে রাতে রয়েছে ইসলামী জলসা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর