রাজশাহীতে স্কুলে পিরিয়ডকালীন অনুপস্থিত ৪২ শতাংশ

রাজশাহী, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-06 17:27:11

রাজশাহীর বেশিরভাগ স্কুলগুলোতে ছাত্রীদের স্যানিটেশন ও ঋতুকালীন (পিরিয়ড) স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বেহাল দশা বিরাজ করছে। আর এ কারণে প্রতিমাসে প্রায় ৪২ শতাংশ ছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকে।

ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ার ফলে পিছিয়ে পড়ছে ছাত্রীরা। এছাড়া পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করতে পারছে না তারা।

উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের (লফস) সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী জেলার প্রায় ৪২ শতাংশ ছাত্রী এই সমস্যার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকে। নগরীর শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে একটু সচেতন রয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা এ সমস্যায় স্কুলে আসা বন্ধ রাখে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসম্মত ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা, সব সময় পানির ব্যবস্থা থাকা, স্যানিটেশন ও হাইজিন ওয়াশের ব্যবস্থার কোনো প্রকার সুবিধা নেই বললেই চলে। একই সঙ্গে সরকারিভাবে এ বিষয়ের উপরে প্রয়োজনীয় বাজেট এবং সকল প্রকার সুবিধা নিশ্চিতে তেমন কোনো নির্দেশনা নেই।

জানা গেছে, ছাত্রীদের জন্য পৃথকভাবে টয়লেট ব্যবস্থাপনা থাকার জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে এ বিষয়ে ছাত্রীদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য নারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি রয়েছে। তবে এ নির্দেশনাটি শুধু কাগজ-কলমে রয়েছে। দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

রাজশাহী নগরী ও উপজেলার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, স্যানিটেশন ব্যবস্থায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, অপরিষ্কার, পানির অব্যবস্থাপনা, সাবান না থাকা, টয়লেটের ভেতরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। এছাড়া টয়লেটের ভেতরে মশা মাছির ভয়াবহ উৎপাত রয়েছে।

শহরে হাতে গোনা দুই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে উপজেলা ও নগরীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের স্যানিটেশন ও ঋতুকালীন সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে মেয়েরা।

রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেগম ইসা বেলা সাত্তার বলেন, ‘ঋতুকালীন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বলা আছে- এ বিষয়ে বলতে কোনো মেয়ে যেন লজ্জা না পায়। শিক্ষকরা যেন তাদের সহযোগিতা করে।’

নগরীর সরকারি পিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরা খানম বলেন, ‘ছেলে মেয়ে এক সঙ্গে থাকা স্কুলগুলোতে এই সমস্যা একটু বেশি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে থাকি। তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষক রয়েছে। তারাই এর সমাধান করে থাকে।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অবসের প্রধান ডা. সাহেলা জেসমিন শিল্পী বার্তা২৪.কমকে জানান, ঋতুস্রাব একটি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। সাধারণত ১১ হতে ১৪ বছর বয়সী মেয়েরা ঋতুস্রাবের মাধ্যমে নারীত্বের পরিপূর্ণতায় পদার্পণ করে। যাদের অধিকাংশই ষষ্ঠ হতে অষ্টম শ্রেণির স্কুলগামী ছাত্রী। কিন্তু এই স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক পূর্ব ধারণা না থাকায় ছাত্রীদের মধ্যে অস্বস্তি ও ভীতি কাজ করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর