জমি দখল করে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ

রাজশাহী, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 04:59:16

রাজশাহী নগরীর খড়খড়ি এলাকায় অন্যের জমি দখল করে নিজস্ব ভবন নির্মাণ করছে বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব সম্পত্তি এবং জোর করে দখল করা সম্পত্তিতে নতুন এ ক্যাম্পাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে শেষ সম্বল হারাতে বসেছেন স্থানীয় আয়নাল হক নামের এক অসহায় ব্যক্তি।

জমি ফিরে পেতে বা ন্যায্য মূল্য পেতে আয়নাল হক বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন দিনের পর দিন। কিন্তু প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়নাল হককে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।

অথচ তার প্রায় ৫ কাঠা জমি রয়েছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাসের একেবারে মাঝখানে। অভিযোগ উঠেছে শুধু এই আয়নাল হকই নয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গাও তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে রেখেছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আয়নাল হক জানান, পৈত্রিক সূত্রে রাজশাহী নগরীর খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় তার প্রায় ৫ কাঠা জমি রয়েছে। ওই জমির পাশে তার অপর চার ভাইয়েরও জমি ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে ওই চার ভাই তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে। তবে একমাত্র আয়নাল হকই তার পৈত্রিক শেষ সম্বলটুকু হারাতে চাননি বলে বিক্রি করেননি এখনো।

আয়নাল হক অভিযোগ করে আরও জানান, তিনি জমি বিক্রি না করলেও তার জমিটি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জোর করে গত মাস দুয়েক আগে দখল করে নেয়। এরপর গত ৩০ নভেম্বর ওই জমিতে থাকা ৫টি বিশালাকার আমগাছ ও একটি খেজুর গাছও কেটে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ সময় বাধা দিতে গেলে আয়নাল হক ও তার পরিবারের লোকজনদের তারা নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে। এছাড়াও জমিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

আয়নাল হক বলেন, ‘তার জমির মূল্য এখনকার বাজারদর অনুযায়ী অন্তত ১৫ লাখ টাকা কাঠা। কিন্তু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাত্র ৬ লাখ টাকা কাঠা হিসাবে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি এই মূল্যে জমি বিক্রি করে অন্য কোথাও একই পরিমাণ জমি কিনতে পারবো না। আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য এই জমির দরকার আছে। তাই আমি জমি হারালে তা আর কিনতে পারব না।’

আয়নাল হক জানান, তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করে কোনো মতে জীবনযাপন করেন। এই অবস্থায় প্রভাবশালী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবার নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।

জমি দখল ও গাছ কাটার অপরাধে স্থানীয় চন্দ্রিমা থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি। এছাড়া বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনাও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এখন পর্যন্ত।

স্থানীয় হোসেন আলী নামে এক ব্যক্তি জানান, এই জায়গার বর্তমান বাজারের চেয়ে অর্ধেক দামও এখন আর দিতে চাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আয়নাল হক ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনের জমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একই কায়দায় দখল করে নিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন দালাল ও প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

এ বিষয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি দেখছি না। প্রজেক্ট ডাইরেক্টর দেখছেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহসান পারভেজ বলেন, ‘এ নিয়ে আমি মোবাইলে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে এটা সত্য যে, আমরা কারো জমি দখল করছি না।’

নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, ‘এ নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু জমি নিয়ে আমার কিছু করার নাই। তারা আদালতে মামলা করতে পারে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর