রাজশাহী রেশম কারখানায় চালু হচ্ছে আরও ৫টি লুম

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 03:39:43

রাজশাহী রেশম কারখানায় আরও ৫টি লুম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা লুমগুলো এখন ঘষে-মেজে চালুর উপযোগী করার কাজ চলছে। ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে পরীক্ষামূলকভাবে কারখানার ৬টি লুম পুনরায় চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে কারখানার সবগুলো লুমই চালু করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার রেশম কারখানা পরিদর্শনে গেলে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম তাদের এ তথ্য জানান।

পরে সেখানে রেশম বোর্ড আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার যোগ দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মনসুর আলম, রেশম বোর্ডের সদস্য নাছিমা খাতুন, এমএ হান্নান, সচিব জায়েদুল ইসলাম, প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় জানানো হয়, রেশম কারখানায় এখন পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি লুম চলছে। লুমগুলো এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ গজ কাপড় উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বলাকা, স্পান সিল্ক থান, কোরা বলাকা, গরদ কাপড় ও থান কাপড়। আরও ৫টি লুম চালুর উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হবে। তখন উৎপাদন আরও বাড়বে।

রেশম বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত রেশম বোর্ডে নিজেদের উৎপাদিত গুটিতেই কারখানার রেশম কাপড়ের উৎপাদন চলছে। তারা কারখানার সবগুলো লুমই চালু করতে চান। তবে এ জন্য আরও বেশি পরিমাণ রেশম গুটি প্রয়োজন। তাই তাদের গুটির উৎপাদন বাড়াতেও কাজ করতে হচ্ছে। যত বেশি কাঁচামাল উৎপাদন বাড়বে ততই বেশি সংখ্যক লুম চালু করা হবে।

রাজশাহী রেশম কারখানাটি চালু করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানান সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার।

জানতে চাইলে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, 'রেশম রাজশাহীর ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে রেশম বোর্ডকে যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমি তা করব। কারখানায় আমরা উৎপাদন দেখতে চায়। এখানে রাজশাহী বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করার ব্যবস্থা করতে চায়।'

জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় এই রেশম কারখানাটি। রেশমের উন্নয়নে রাজশাহীতেই স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের প্রধান কার্যালয়।

তবে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানার তিন শতাধিক শ্রমিক। সে সময় অনেক আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি রাজশাহীবাসী।

বন্ধ ঘোষণার সময় কারখানায় মোট ৬৩টি লুম ছিল। এর মধ্যে উৎপাদন চলত পুরনো ৩৫টি লুমে। নতুন ২৮টি লুম চালুর আগেই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের আগে কারখানাটি বছরে এক লাখ ৬ হাজার মিটার রেশম কাপড় উৎপাদন করত। কারখানায় ৬৩টি লুম চালু করা গেলে বছরে কাপড় উৎপাদন হবে দুই লাখ ৮৭ হাজার মিটার।

দীর্ঘদিন পর রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেশম বোর্ডের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেন। তার প্রচেষ্টায় গেল বছরের ২৭ মে পরীক্ষামূলকভাবে কারখানার ৫টি লুম চালু করা হয়। পরে চালু হয় আরও একটি লুম। ধীরে ধীরে সব লুমই চালুর পরিকল্পনা রয়েছে রেশম বোর্ড কর্তৃপক্ষের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর