বিল দিতে অনীহা, পদ্মার চরে সৌরবিদ্যুৎ বন্ধের পথে

রাজশাহী, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 21:01:12

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মার চরে পাঁচ বছর আগে চালু হয়েছিল সৌরবিদ্যুৎ মেগা প্রকল্প। মাঠে সেচ পাম্প চালু করে ফসল উৎপাদনেও সহায়ক ভূমিকা রাখছিল এই প্রকল্প।

তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেড় বছরের মাথায় রাতের বেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এতে বিড়ম্বনা শুরু হয় চরবাসীর জীবনে। তারাও বিল পরিশোধ করতে গড়িমসি শুরু করেন। এতে ক্রমেই বকেয়া বিল বাড়তে থাকে।

বর্তমানে ৩০ লাখ টাকার বকেয়া আদায়ে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে প্রকল্প ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন কর্মকর্তারা। ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে এক সময়ের প্রশংসিত এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প।

২০১৪ সালে সরকারি সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সহযোগিতায় রাজশাহীর বাঘায় পদ্মা নদীর মধ্যে অবস্থিত দাদপুর চরে দুই বিঘা জমির ওপর হাইড্রোন বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড প্রকল্পটি (সোলার মিনি গ্রিড) বাস্তবায়ন করে। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ছয় কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক দশমিক পাঁচ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ সোলার মিনি গ্রিড নির্মাণ করা হয়।

হাইড্রোন বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচির কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করে। প্রকল্পের অধীনে পদ্মার মধ্যে দাদপুর, পলাশী ও কালিদাসখালী চরে প্রায় ৬০০ গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৬ সালের শুরুর দিক থেকে রাতে বিদ্যুৎ পান না তারা। প্রকল্পের কর্মকর্তারা উৎপাদন না বাড়িয়ে অতিরিক্ত সংযোগ দেন। অর্থ আদায়ের লোভে এটা করেন তারা। কিন্তু রাতে বিদ্যুৎ না পাওয়ায় গ্রাহকরা বিল পরিশোধ বন্ধ করে দেন।

দাদপুর চরে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের নৈশপ্রহরী লিয়াকত আলী বলেন, ৫১৮টি বাড়িতে এখনও সংযোগ রয়েছে। সারাদিন বিদ্যুৎ দেওয়া যায়, কিন্তু রাতে আর মেশিনে লোড টানতে পারে না। ফলে ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় গ্রাহকরা আর বিল দেয় না।

তিনি জানান, তার মাসিক বেতন সাড়ে ছয় হাজার টাকা, কিন্তু পাঁচ মাস ধরে বেতন পাননি। তিনি ছাড়াও আরও দুইজন নৈশপ্রহরী এবং একজন লাইনম্যান কাজ করেন। তাদেরও বেতন বন্ধ রয়েছে। তারা সবাই অন্য কাজের খোঁজ করছেন।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ার‌ম্যান আজিজুল আজম খান বলেন, নদীর ওইপার থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে পল্লী বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। লাইনের সঙ্গে সংযোগ দেয়া হলে আমাদের দুর্ভোগ আর থাকবে না। বিষয়টি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে অবগত করেছি। তিনি চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।

হাইড্রোন বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী রেনেল সিদ্দিকী বলেন, দেড় বছর প্রকল্পটি ভালোভাবে চলেছে। ১০ টাকা ইউনিট হিসেবে এই গ্রিড থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পেয়েছেন ছয় শতাধিক চরবাসী। মাসিক লাইন রেন্ট ছিল ১০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গ্রাহকরা বিল দিচ্ছেন না। গ্রাহকদের কাছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। এ বকেয়া টাকা না পেলে এটা সংস্কার করাও সম্ভব হচ্ছে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর