বরিশালের লাখুটিয়া জমিদার বাড়ি সংরক্ষণের উদ্যোগ

বরিশাল, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 02:47:58

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাখুটিয়া জমিদার বাড়ি ও মন্দির সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। পাশাপাশি ব্রিটিশ আমলের এই স্থাপনাটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর সূত্রে জানা যায়, এটি সংরক্ষণের জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন বরাবর বাড়িটির উত্তরাধিকার অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ড. আলপনা রায় একটি চিঠি দেন। আর সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে এর আগে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ বাড়িটি পরিদর্শন করেছিলেন। সে সময় এটি সংরক্ষণের নির্দেশনাও দিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ান হাইকোর্টের আইনজীবী এবং লাখুটিয়া জমিদার বাড়ির অন্যতম উত্তরাধিকার পঙ্কজ রায়ের কন্যা ড. আলপনা রায় তার চিঠিতে বাড়িটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমানকে এই স্থাপত্য সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।

চিঠিতে তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি সংবাদ শুনেছি যে, লাখুটিয়া জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশ সরকার ভেঙে ফেলতে পারে। আর এই সংবাদটি বাংলাদেশে এবং বিদেশে বসবাসরত রায় পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৭ শতকে রূপচন্দ্র রায় লাখুটিয়ার এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ১৯ শতকে তাঁর পৌত্র রাজচন্দ্র লাখুটিয়ার জমিদারির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।

বরিশাল শহর থেকে উত্তর দিকে লাখুটিয়া এলাকায় অবস্থিত এই বাড়িটিতে ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্য ইতিহাস সংগৃহীত। বেশিরভাগ স্থাপনাই আটচালা দেউল রীতিতে তৈরি। বাড়ির সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনা হলো শিখররীতির অক্ষত কিছু মন্দির। দক্ষিণে সদর দরজার দিকে এগোলেই দেখা মেলে বিখ্যাত বউরাণীর দিঘি।

তবে কালের স্রোতে আজ সেই ঐতিহ্য বিলীনের পথে। বাড়িটির অধিকাংশ ভবন ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাছাড়া বাড়িটির চারদিকের দেয়ালগুলো ধসে পড়েছে। বাইরের দিক থেকে উপরে ওঠার সিঁড়ি ভেঙে পড়ায় দোতলায় ওঠার কোনো উপায় নেই এখন।

সব মিলিয়ে বর্তমানে এটি বিধ্বস্ত দোতলা একটি ভবন। ছোট-বড় পাঁচটি মন্দির, একটি পুকুর এবং একটি বড় দিঘি এই জমিদার বাড়ির সাক্ষ্য বহন করে আসছে।

এদিকে, ঐতিহ্যের স্মারক এই জমিদার বাড়ি অবহেলিত থাকলেও এখানে থেমে নেই কৌতূহলি দেশি-বিদেশি পর্যকটদের আসা-যাওয়া। নানা বয়সী মানুষের আনাগোনা থাকে সর্বদা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বাড়ি সংলগ্ন এলাকা পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দা সামসুল আলম (৭১) বার্তা২৪.কমকে বলেন, লাখুটিয়া জমিদার বাড়ি ঘিরে জমিদারী প্রথার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে অনেকগুলো ভবন ছিল, আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে গেছে।

চারুকলা সংগঠক সুশান্ত ঘোষ বলেন, এই জমিদার বাড়িটি ঘিরে অনেক ইতিহাস রয়েছে। এই বাড়িটির সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারেরও সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া এটি একটি বিস্তীর্ণ এলাকা, এই বাড়িটি ঘিরে যদি পর্যটন স্পট এবং পুরাকীর্তি ঘোষণ করা হয়, তাহলে মানুষ এর সম্পর্কে আরো জানতে পারবে এবং এর ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে।

বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারী কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, এই জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকারের দেয়া আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা লাখুটিয়া জমিদার বাড়িটি পরিদর্শন করেছি। পরবর্তীতে এটি সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি প্রতিবেদন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় খুলনায় প্রেরণ করেছি।

তিনি বলেন, এই জমিদার বাড়িটি প্রাচীণ স্থাপত্য শিল্পের স্মারক। এটি সংরক্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রাচীন জনপদের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে এ বাড়িটির স্থাপত্য নিদর্শন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান ও জাতীয় পর্যায়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে লাখুটিয়া জমিদার বাড়ির ৪৯ দশমিক ৫০ একর জমি রয়েছে। ভবনটি এখন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বীজ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। আশেপাশে বেশ কয়েকটি বীজ সংরক্ষণাগার ভবন নির্মাণ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর