কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল বোরিং শুরু ২৪ ফেব্রুয়ারি

চট্টগ্রাম, জাতীয়

আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 23:46:12

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেলের মূল কাজ বোরিং শুরু হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে বোরিংয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে টানেলের দেশে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর মতো বাস্তবায়ন হবে দেশের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন। এতে চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউন।

জানা গেছে, ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ও চারলেন বিশিষ্ট কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন সরকার। আর বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করবে।

সরেজমিনে টানেল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে চলছে টানেলে বোরিং মেশিন (টিবিএম) স্থাপনের কাজ। পতেঙ্গায় কাজের সুবিধার্থে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা সর্বসাধারণের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চায়না কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কম্পানি’ (সিসিসিসি)

প্রকল্প কাজের অগ্রগতি ও বর্তমান ব্যয়সহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্পের কাজ ৩২ শতাংশ শেষ হয়েছে। টানেল বোরিং মেশিনসহ (টিবিএম) যাবতীয় যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। এতে কাজের গতিও অনেক বেড়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।’

জানা যায়, নদীর তলদেশে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি এসেছিল ২০০৮ সালে। চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রতিশ্রুতি দেন।

চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কম্পানি (সিসিসিসি) এবং হংকং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অভি অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস হংকং লিমিটেড যৌথভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেলের এই সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ করে উক্ত দুটি প্রতিষ্ঠান। এর ওপর ভিত্তি করেই চীন ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে সিসিসিসি এখন টানেলের নির্মাণকাজ শুরু করছে। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্প প্রতিবেদনে অনুযায়ী ৪ বছরের মধ্যে টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০১৪ সালে কাজ শুরু করে ২০১৭ সালে কাজ শেষ করার প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়। তবে চীন সরকার অর্থছাড়ের বিলম্ব করায় প্রকল্প কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি।

২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের পরে শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন।

প্রথমদিকে এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ধরা হলেও বিলম্বে কাজ শুরু করায় প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ৪৩৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

চীনের ঋণের উপর বাংলাদেশ সরকারকে দুই শতাংশ হারে সুদ, কমিটমেন্ট চার্জ দশমিক ২০ শতাংশ ও ম্যানেজমেন্ট চার্জ দশমিক ২০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে পুরো ঋণ।

নির্মাণ ব্যয়ের বাইরে টানেলের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। টানেল নির্মাণকালীন চার বছরে সুদ বাবদ ৪২৯ কোটি টাকা লাগবে।

চীন ও বাংলাদেশের প্রায় ১ হাজার ২৫০ জন শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন। সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে কাজ করছেন ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের নিরবিচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ। সংযোগ স্থাপন হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। যুক্ত করা হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে।

দুই টিউব সম্বলিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল টানেল, পতেঙ্গা ও কর্ণফুলী প্রান্তের ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজসহ মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ২৭ কিলোমিটার বিশিষ্ট কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রামের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর