নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানীতে চলছে লেগুনা

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 13:11:22

রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা এড়াতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক নির্দেশনায় শহরের প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ৫ মাস পর রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে আবারও দাপটের সাথে চলাচল করছে অবৈধ এসব লেগুনা।

জানা গেছে, শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে নিষেধাজ্ঞার দু’এক মাস পরই রাজধানীতে লেগুনা চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে ডিএমপি’র নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানীতে আগের মতোই চলছে লেগুনা।

শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইন্দিরা রোড, খামারবাড়ি, মহাখালী, সাতরাস্তা ও লিংকরোডে সরেজমিনে দেখা গেছে, আগের মতোই ১২-১৫ বছরের শিশু-কিশোররা লেগুনায় হেলপার ও চালককের আসনে বসে ঝুঁকিপূর্ণ লেগুনা নিয়ে রাজধানী দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও যাত্রীরা বাধ্য হয়ে লেগুনায় যাতায়াত করছেন। এসব নিষিদ্ধ লেগুনা চলছে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টদের সামনে দিয়ে। তাদের এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

লেগুনার চালক ও হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই আবারও রাস্তায় লেগুনা নামিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিতে হয়। এছাড়া অনেক পুলিশ অফিসারই লেগুনার মালিক। ফলে টাকা খরচ হলেও চলাচলে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না।

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থেকে বাড্ডা লিংকরোডগামী গ্রিন মটরস পরিবহনের লেগুনার চালক মো. সোহেল বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘চাহিদা আছে বলেই রাস্তায় লেগুনা চলছে, যাত্রীরা উঠছেন। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে গাড়ি নামিয়েছেন মালিকরা। মাঝেমধ্যে সমস্যা হলে মালিকপক্ষ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করেন।’

বাড্ডা লিংকরোডে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘লেগুনা চললে আমাদের কী করার আছে? মানুষ রাস্তায় গাড়ি পাচ্ছে না। লেগুনা না চললে তারা কিভাবে যাবে? লেগুনা এখন আর ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করছে না।’

রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

অন্যদিকে যাত্রীরা অভিযোগ করেন, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন। যেসব রাস্তায় লেগুনা চলাচল করতো সেসব রাস্তায় লেগুনা চলাচল বন্ধ হওয়ায় তাদের সমস্যা হতো। কিন্তু এখন আবারও লেগুনা চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে যাত্রীরা এখন যাতায়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।

এ বিষয়ে মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘আমাকে প্রতিদিন খামারবাড়ি থেকে মহাখালী অফিসে যেতে হয়। এই রোডে তেমন কোনো লোকাল বাস নেই, সব সিটিং সার্ভিস। তাও আবার ১০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে এই রোডে লেগুনার বিকল্প নেই। তাই হুট করে বন্ধ করলেই তো চলবে না। আগে লেগুনার বিকল্প বের করতে হবে তারপর বন্ধ করা উচিৎ।’

এদিকে বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীতে ৫ হাজারের মতো বৈধ লেগুনা আছে কিন্তু চলছে ১০ হাজারের মতো। এছাড়া অধিকাংশ লেগুনা চালকের নেই লাইসেন্স। কিশোর এসব চালকরা নকল জন্ম সনদ বানিয়ে বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স করিয়ে নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লেগুনার বৈধতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন আছে তেমনি চালকের লাইসেন্স নিয়েও আছে সন্দেহ। এছাড়া অধিকাংশ চালক ও হেলপার কিশোর কিংবা শিশু, একটিও আরেকটি বড় অপরাধ। এসব বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘ডিএমপি যখন এ সিদ্ধান্ত নেয় তখন আমরা এর সমালোচনা করেছিলাম। কেননা বিকল্প ব্যবস্থা না করে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে যাত্রীর ভোগান্তি বাড়বে। এছাড়া রাজধানীতে নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। হুটহাট করে লেগুনা, রিকশা বা ইজিবাইক বন্ধ করে আবার চালু করে কোনো সমাধান হবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশ যদি চায় রাজধানীতে একটিও লেগুনা চলার ক্ষমতা নেই।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর