বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ৪০ বছর পূর্তি

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-28 12:00:16

'আলোকিত মানুষ চাই' স্লোগান নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তার ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। আলোর পথের এই যাত্রায় এখন বছরে ২৮ লাখ পাঠক অংশ নেন।

সকালে রাজধানীর বাংলামোটরের ১৭ ময়মনসিংহ রোড থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রায় দেখা গেল অ্যারিস্টটল এবং সক্রেটিসকে। এই দুই বিখ্যাত দার্শনিকের সাথে পাওয়া গেল শেখ সাদী, বিদ্যাসাগর, নজরুল, বেগম রোকেয়া, গৌতম বুদ্ধসহ আদি-মধ্য এবং আধুনিক যুগের শিল্প-সংস্কৃতির সকল কুশলিবদের। কে নেই? পাওয়া গেল বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকেও। দেশীয় সংস্কৃতির নানা বিষয়সহ ১৮ ভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করা হয়েছে শোভাযাত্রাকে। এর একভাগে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবীরা সেজেছেন সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিভাগের অবদান রাখা বিখ্যাত সব ব্যক্তিত্বসহ পৃথিবীর বিখ্যাত সব মানুষের সাজে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৪০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের শুরুতেই বর্ণিল এই শোভাযাত্রা। যার নেতৃত্বে এই কেন্দ্রের স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। নানা নকশায় কারুকার্য খচিত কাগজে তৈরি মুকুট আর কাপড়ের আলখেল্লা পরে এদিন তিনি আলোকবর্তিকার ভূমিকায়। সত্যিকার অর্থেতো তিনি তার চাইতেও বড় কিছু।

আলোর পথের এই স্বপ্নদ্রষ্টা বলেন, ‘আমরা একসময় চেয়েছিলাম প্রতিটি মানুষের জীবন উজ্জ্বল হোক, আলোকিত হোক, সুন্দর হোক। যাতে বড় হবার পথে সুন্দর কিছু তারা করেন। আমাদের দেশ যাতে পৃথিবীর মধ্যে একটা শ্রেষ্ঠ দেশের মর্যাদায় চলে যেতে পারে। মানুষ ছোট আর জাতি বড়, এটা কখনোই হতে পারে না। আমরা সেজন্য মানুষকে বড় করার চেষ্টা করেছি। যাতে জাতি একদিন বড় হতে পারে। আমরা কাজ করে গেছি। সাফল্য-ব্যর্থতা এইসব নিয়ে ভাবিনি। আমি একা নই। অনেক মানুষের আত্মদান এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। আমি হয়তো তার সামনে ছিলাম।’

আলোকিত মানুষ গড়ার এ কারিগর বলেন, আমাদের চিত্তের যে বিকাশ, এটা ৪০ বছরের বিষয় নয়। এটা হাজার হাজার বছরের বিষয়। চিরদিন অন্ধকার আমাদের গ্রাস করে নিতে চাইবে এবং চিরদিন আমরা তার সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হবো। লক্ষ লক্ষ চল্লিশ বছর আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।’

শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সামনের খোলা জায়গায় বই প্রেমিক পাঠক এবং কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকদের মেলা বসে। বিখ্যাত ব্যান্ড পার্টি রামেশ্বরের ব্যান্ডের ঢোলের তালে শুরু হয় আনন্দ উল্লাস। প্রাণ-উচ্ছ্বাসের উল্লাসে ভরপুর ছিল এই আলোর নাচন।

শোভাযাত্রা শেষে আগতদের আপ্যায়ন করা হয় নানা রকমের পিঠা, খই, মুড়ি, মোয়া, বাতাসা, নিমকি, মুরালিসহ নানা রকমের বাঙালিয়ানা খাবার দিয়ে।

পরে বর্ষপূর্তির মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত শিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসি, কিরণ চন্দ্র রায়, সাদী মোহাম্মদ ও প্রিয়াংকা গোপ ছাড়াও দেশবরেণ্য শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টিরা ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেখক এবং অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।

এছাড়া ৪০ বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানাতে সারাদিন কেন্দ্রের মূল ভবনে ভিড় করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার পাঠকরা।

১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। ১১ সদস্যের ট্রাস্টিবোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত এই কেন্দ্র বর্তমানে ১২ টি কর্মসূচির মাধ্যমে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কর্মসূচি রয়েছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে। ১৪ হাজার স্কুল-কলেজ, ৬৪ টি জেলা এবং ৪৮৭ টি উপজেলায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কর্মসূচি রয়েছে। দেশের মোট এক হাজার ৯০০টি জায়গায় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে যেতে পারেন পাঠকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর