ধর্ষণ ঠেকাতে হারকিউলিস নয়, প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি!

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 03:05:17

দেশে ধর্ষণ ঠেকাতে হারকিউলিসের আগমনকে সমর্থন করছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাদের মত, যদি ধর্ষকদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায় তাহলে ধর্ষণের প্রবণতা কমতে পারে। আর শাস্তি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে হারকিউলিসের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সমাজে।

প্রসঙ্গত, গত এক মাস ৩টি ধর্ষণ মামলার আসামিদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে গ্রিক দেবতা ‘হারকিউলিস’র বিরুদ্ধে। আসামিদের হত্যা করে স্বীকারোক্তিমূলক এবং সতর্কবাণী চিরকুট ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে লাশের পাশে।

তবে ধর্ষণ মামলার আসামিদের এমন শাস্তি নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সমাজে। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করলেও রীতিমতো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, সমাজে হারকিউলিসের আগমন ঠেকাতে হবে। না হলে  এটা সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে যেতে পারে। আর এর ফলে দেশ বড় ধরণের সমস্যায় পড়বে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডগুলো যে একই ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী করছে এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নয়। তবে এই হারকিউলিস যে কেউ হতে পারে।

তবে এ বিষয় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিশেষ কোনো তদন্তের প্রয়োজন নেই বলেও তিনি মনে করেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আছে, সেসব দেশেই এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে। বাংলাদেশেও হারকিউলিসের আগমন বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেই হয়েছে। কেননা সাধারণ মানুষ ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে বিচার পাচ্ছেন না। ফলে মানুষের মনে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে মানুষের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি হারকিউলিসের ভূমিকায় চলে আসতে পারে।

এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘একটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আরেকটি হত্যাকাণ্ডের দোয়ার খুলে দেয়। যাদের ধর্ষণের আসামি বলা হচ্ছে তারা আসলেই অপরাধী কি না- সেটার কোনো প্রমাণ নেই। তাই এসব হত্যাকাণ্ড কারও জন্যই কল্যাণকর নয়। ফলে অপরাধীদের আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি এসব হত্যাণ্ডের সাথে কারা জড়িত সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নয়। এই ধারণা যদি সংক্রমণ হয় তাহলে সমাজে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নতুন সংস্করণ হারকিউলিস’র আগমন। যে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকে সে দেশে এমন ধরণের ঘটনা ঘটে। দেশের কোনো কিছুই এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আয়ত্তের বাইরে নয়। তারা চাইলে যেকোনো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়াকে আমরা এতটা দুরূহ করে ফেলেছি যে, অপরাধীদের বড় একটি অংশ খালাস পেয়ে যায়। সে জায়গা থেকে এ ধরণের ঘটনা স্বাভাবিক। আর এ ধরনের কাজে মানুষের সহানুভূতিও পাওয়া যায়। আর এসব হত্যাকাণ্ড মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার শঙ্কাও থেকে যায়।’

প্রসঙ্গত, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, চলতি বছরে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার আন্ডারিয়া এক মাদ্রাসাছাত্রী (১৩) ধর্ষণ মামলার আসামি রাকিব মোল্লা (২০) ও সজল জমাদ্দার (৩০) এবং গত ১৭ জানুয়ারি ঢাকার আশুলিয়ায় এক কিশোরী ধর্ষণ মামলার আসামি রিপনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তা এখনও জানতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৯ হাজারের বেশি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে মাত্র ৩ শতাংশ ধর্ষণ মামলার আসামিদের সাজা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর