'রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে'

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-17 06:56:51

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। আজ হোক কাল হোক তাদের সেখানেই ফিরে যেতে হবে। তবে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারে নিয়োজিত কানাডা সরকারের বিশেষ দূত বব রে।

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মিয়ানমারে নিয়োজিত কানাডা সরকারের বিশেষ দূত বব রে এসব কথা জানান। রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের সহায়তায় এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে কানাডিয়ান হাইকমিশন অব বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গা সংকট একটি আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে চলেছে। যার দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রভাব এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর পড়বে। নিরাপত্তা ও কৌশলগত বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।'

মূল বক্তৃতায় বব রে বলেন, 'রোহিঙ্গা সংকটের বিচিত্র দিক রয়েছে। তা একই সঙ্গে জটিল ঐতিহাসিক, ভৌগলিক ও আদর্শগত দ্বন্দ্বের ফলাফল। কর্তৃত্ববাদী শাসন, ধর্মীয় নিধন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ এই সংকটের বিভিন্ন প্রবণতা তৈরি করেছে। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ-সমৃদ্ধ ভূমি দেশটির ক্ষমতার প্রধান অংশীদার সেনাবাহিনী এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থগোষ্ঠীর বহুমুখী প্রতিযোগিতা এই সংকটকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।'

বর্তমান ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষিতে মায়ানমার সুবিধাজনক অবস্থানে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'দুই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। এতে তারা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দূরবর্তী অবস্থানে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পরাশক্তিগুলো মিয়ানমারের রিরুদ্ধে কোনো দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে পারছে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদী আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সুরাহার পথ খোঁজা প্রয়োজন। এই আলোচনার জন্য রোহিঙ্গাদের উপর নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা বললে বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই সংকট সমাধানের জন্য স্বল্প কিংবা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সমাধানের পথও খুঁজতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা। আবার, একই সঙ্গে শরণার্থীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা কট্টরপন্থা কিংবা সন্ত্রাসবাদের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পড়ে।'

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'অতীতে আমরা মিয়ানমারের দিকে বিশেষ নজর দেইনি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য পাঁচ-দশ বছরও লেগে যেতে পারে। যেহেতেু এটি একটি আঞ্চলিক সংকট, ফলে তা নিরসনের ক্ষেত্রে একমাত্র চীনই আমাদের সহায়তা করতে পারে। চীনের সঙ্গে সরাসরি কূটনৈতিক সহায়তায় তা সম্ভব না হলে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর যেমন জাপান, কিংবা আশিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সাহায্যে তা করতে হবে।'

মেজর জেনারেল (অব.) এএনএম মুনিরুজ্জামান বলেন, 'রোহিঙ্গা ইস্যুর এক বছর পার হয়েছে, কিন্তু সমাধানের পথে আমরা বিশেষ এগুতে পারিনি। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা আমাদের জন্য নিরাপত্তা সংকট তৈরি করছে।'

প্যানেল আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত হতে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইন্সটিটিউট ফর পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্ন্যন্স (আইপিএজি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মুনীর খসরু।

এ সম্পর্কিত আরও খবর