কর্ণফুলী দখলমুক্ত: ম্যাজিস্ট্রেট মুনীরের মতো দুঃসাহসিক অভিযান চাই

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 11:22:11

কর্ণফুলী নদীতে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত উচ্ছেদ অভিযান। দীর্ঘদিন উচ্ছেদ অভিযান না থাকায় কর্ণফুলীর নদীর তীরে শক্তিশালী হয়েছে দখলদারদের সিন্ডিকেট। এ অভিযান কতটুকু ফলপ্রসূ হবে এবং তা শেষ পর্যন্ত দখলদারদের উপর কিরূপ চাপ সৃষ্টি করবে, তা বন্দর নগরীর জনসাধারণ দেখতে চায়। চট্টগ্রামের প্রাণভোমরা কর্ণফুলী নদী রক্ষায় যে দু:সাহসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন চট্টগ্রাম বাসীর প্রিয় ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী, তা এখনো চট্টগ্রামবাসীর স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল।

বিশেষ করে পতেঙ্গা থেকে সল্ট গোলা হয়ে বাড়িক বিল্ডিং মোড়, মাঝির ঘাট, সদর ঘাট, ইয়াকুব নগর, ফিরিঙ্গি বাজার, চাকতাই, লালদিয়ার চর, কালুরঘাট পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার  এলাকায় মুনীর চৌধুরীর সাড়াশি অভিযানে ধ্বংস করা হয় চার হাজার অবৈধ স্থাপনা। উদ্ধার  করা হয় কর্ণফুলী নদী তীরবর্তীসহ প্রায় ২হাজার কোটি টাকার ১২৫ একর বন্দরের মূল্যবান ভূমি। তাঁর অভিযান থেকে রেহাই পায়নি সাকা চৌধুরীর অবৈধ দখলকৃত ভূমি। এমনকি তদানীন্তন মেয়র মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পতেঙ্গার কাছে কর্ণফুলী তীর দখল করা অবৈধ জেটি উচ্ছেদ করা হয়। কালুরঘাট এবং শিকলবাহা এলাকায় বন্দরের দু’তীর ঘেষে গড়ে তোলা অবৈধ ডকইয়ার্ড ধ্বংস করে দেয়া হয়।

বন্দরের ৩নং জেটি এলাকা থেকে বিশাল ভবন উচ্ছেদ করে ডক জাহাঙ্গীরের দখল থেকে উদ্ধার  করা হয় ৪৪ কাঠা মূল্যবান ভূমি। নিউমুরিং এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা হয় ডক সিরাজের ২৫ একরের অপরাধ সাম্রাজ্য, উদ্ধার করা হয় বন্দরের শতকোটি টাকার ভূমি।

মুনীর চৌধুরীর অভিযান থেকে রক্ষা পায়নি বিএনপি, আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের অবৈধ দখলদাররা। সেসময়ে তাঁর উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রবল রাজনৈতিক চাপ এবং হুমকি আসলেও একদিনের জন্যও তাঁর অভিযান বন্ধ হয়নি। বন্দরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশ্বাস করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৪ বছরের ইতিহাসে মুনীর চৌধুরীর সময়কালের মতো উচ্ছেদ অভিযান আর কখনো হয়নি। একটি ঘটনা তার বড় প্রমাণ।

২০০৬ সালে লালদিয়ার চর উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় পাঁচ হাজার দখলদার ও বাসিন্দাদের আক্রমণের মুখে পুলিশ বিতাড়িত হয়ে গেলে ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর মাত্র সাতজন আনসার সদস্যকে নিয়ে ১৩৬ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের জমিটি উদ্ধার  করেন, যেখানে আজ গড়ে উঠেছে শতকোটি টাকার আইসিডি টার্মিনাল, যা থেকে বন্দর পাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব । 

এছাড়া বর্তমানে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের যে বিশাল স্থাপনা, তাও ছিল বেদখলে। এখানেও শক্তিশালী দখলদারদের উচ্ছেদ করে মুনীর চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করেন। এমনকি রেল বাহিনী কে হটিয়ে  রেলওয়ের ৪৫বছরের দখল থেকেও মুক্ত করেন দেড়শ কোটি টাকার জমি। দিন-রাত রাডারের মতো সক্রিয় থেকে ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর কর্ণফুলী নদীকে পাহারা দিয়ে রাখতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা  রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে বুলডোজার আর ক্রেন দিয়ে উপড়ে ফেলেছেন শত শত অবৈধ ভবন ও স্থাপনা।    এমনকি নদী দূষণের ঘটনাও শক্ত হাতে দমন করেছেন। সহস্রাধিক  দেশি-বিদেশী জাহাজকে আটক করে কোটি কোটি টাকা জরিমানা করেছেন এবং দূষণ বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর বদলির দীর্ঘদিন  পরও কর্ণফুলীর দখল এত বেপরোয়া রূপ পায়নি। গত তিন/চার বছরে চাকতাই এলাকায় তা প্রকট রূপ নিয়েছে। অথচ বন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট আছে, এস্টেট বিভাগ আছে। কিন্তু অভিযানের চিহ্ন নেই।

ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কর্ণফুলী নদী রক্ষার এ উদ্যোগ কে চট্টগ্রাম বাসী স্বাগত জানাচ্ছে। প্রত্যাশা করছে, মুনীর চৌধুরীর সততা, সাহস ও আপোষহীন মনোভাব নিয়ে যেন অভিযান বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রাপ্তরা কাজ করে যান। মাঝপথে অভিযান যেন থেমে না যায় ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর