ড্রিমলাইনারে যেতে অনীহা বিমানের সিনিয়র পাইলটদের

ঢাকা, জাতীয়

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 00:00:40

বিশ্বের সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার এখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান বহরে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ২০০৮ সালে চারটি ড্রিমলাইনার কেনার চুক্তি করেছিল রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স। অথচ এই স্বপ্নের উড়োজাহাজ চালনায় অনীহা তৈরি হয়েছে বিমানের সিনিয়র পাইলটদের। এসব কারণে বিমান সময়মতো পাইলটদের প্রশিক্ষণও সমাপ্ত করতে পারেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গেল বছরের আগস্টে বিমানের বহরে যুক্ত হয় প্রথম বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’ আর ডিসেম্বরে যুক্ত হয় দ্বিতীয় ড্রিমলাইনার ‘হংসবলাকা’ উড়োজাহাজ। এই দুটি ড্রিমলাইনার দিয়েই ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ডিসেম্বরে লন্ডন রুট চালু হবে। এই পরিকল্পনা থেকে ড্রিমলাইনার পরিচালনার জন্য বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত করতে পেরেছিল মাত্র ৬ সেট পাইলট। কিন্তু ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ১২ সেট বৈমানিক প্রয়োজন। এক সেটে দুইজন করে বৈমানিক থাকে।

সূত্র জানায়, এর আগে বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর পরিচালনার ক্ষেত্রে সময়মতোই পাইলট তৈরি করতে পেরেছিল। কিন্তু এবার ড্রিমলাইনারের ক্ষেত্রে সিনিয়র পাইলটদের কাছে যখন প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রস্তুাব দেওয়া হয়, তখন তারা এতে অনাগ্রহ দেখান। সবচেয়ে বেশি সিনিয়র ৫ পাইলট ড্রিমলাইনারে যাওয়ার প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিনিয়র পাইলটরা নিজেরাই শুধু না করেননি, জুনিয়র পাইলটদেরও ড্রিমলাইনারে যেতে নিরুৎসাহিত করেন। এ বিষয়ে বিমানের একজন সিনিয়র পাইলট নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা জুনিয়রদের ড্রিমলাইনারে যেতে না করিনি। কিন্তু জুনিয়র পাইলটরা যদি বোয়িং ৭৩৭ ছেড়ে ড্রিমলাইনারে যায়, তাহলে এসব উড়োজাহাজ কারা পরিচালনা করবে সেটাও ভাবতে হবে।

বিমানের আরেক পাইলট নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, নি:সন্দেহে ড্রিমলাইনার আধুনিক উড়োজাহাজ। তবে এটি একটি ছোট উড়োজাহাজ। এর আসন সংখ্যা মাত্র ২৭১টি। আর বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর এর আসন সংখ্যা ৪১৯। বিশ্বের বেশিরভাগ বড় বড় এয়ারলাইন্সে ড্রিমলাইনার গুরুত্বপূর্ণ উড়োজাহাজ নয়। ওইসব এয়ারলাইন্সে বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর বড় উড়োজাহাজ। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর এর পাইলটদের চাহিদাও বেশি। আর তাই চাকরির বাজারের বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর পাইলটরাই এগিয়ে থাকেন। এসব বিবেচনায় বিমানের সিনিয়র পাইলটরা ড্রিমলাইনারে যেতে ততটা আগ্রহী না।

বিমানের এক মার্কেটিং কর্মকর্তা জানান, ড্রিমলাইনার দিয়ে ঢাকা-ব্যাংকক, ঢাকা-কুয়ালালামপুরের মতো ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। তাছাড়া ১১ ঘণ্টার নিচে ড্রিমলাইনার দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে মুনাফা করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ড্রিমলাইনারের প্রশিক্ষণে যেতে রাজি নয়, বিষয়টি এরকম নয়। কারণ পাইলটদেরকে বিকল্প দেওয়া হয়েছিল, তারা ড্রিমলাইনারে যেতে চায় নাকি চায় না। সুতরাং কেউ যদি না যেতে চান তা দোষের কিছু নয়।

এ প্রসঙ্গে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) শাকিল মেরাজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ড্রিমলাইনারের পাইলটদের প্রশিক্ষণ চলছে। খুব শিগগিরই সকল প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট ড্রিমলাইনার চলা শুরু করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর