খুলনায় উপজেলা নির্বাচন: প্রচারণায় ব্যস্ত সম্ভাব্য প্রার্থীরা

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, খুলনা, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 08:33:43

একাদশ সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই খুলনার ৯টি উপজেলায় শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। তবে শীত-কুয়াশা কাটিয়ে খুলনায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া। উপজেলা নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। অপরদিকে বিরোধী শিবির বিএনপি নির্বাচনী মাঠেই নেই। এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বলেই ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিভাগ ভিত্তিক ৫ ধাপে এবারের পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ।

এছাড়া নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, আগামী ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য খুলনা জেলার ৯টি উপজেলা- দিঘলিয়া, কয়রা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, রূপসা, তেরখাদা, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২য় ধাপে একই সাথে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলা- কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা, কুমারখালী, মিরপুর, খোকসা ও দৌলতপুর। ঝিনাইদহ জেলার সদর, শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু ও কালীগঞ্জ। যশোর জেলার শার্শা, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, সদর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর। মেহেরপুর জেলার সদর, মুজিবনগর ও গাংনীসহ মোট ১২৫টি উপজেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এবারই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রতীকে হবে উপজেলা নির্বাচন। যে কারণে উপজেলা নির্বাচনের ভোট নিয়ে বাড়তি আগ্রহ ক্ষমতাসীন দলে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় নব-নির্বাচিত এমপিদের কাছাকাছি ভিড়তে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিতরা চাচ্ছেন উপজেলায় প্রার্থী হতে। মনোনয়নের দৌড়ে থাকা নেতারা এরই মধ্যে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে সবার কাছে দোয়া চাইছেন। পুরানো প্রার্থীদের সঙ্গে এবার চারদিকে নতুন মুখের ছড়াছড়ি। প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের ৪-৬ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থী সরব রয়েছেন।

অপরদিকে জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়া বিএনপি এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে যাবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছে।। প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হলেও বিএনপি এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এজন্য বিএনপির কোন প্রার্থী মাঠে নেই।

এছাড়া সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবার ঘোষণা দিলেও খুলনার উপজেলার নির্বাচনী মাঠে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। সদ্য শেষ হওয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনেও খুলনার ৩টি আসনে দলটির প্রার্থী থাকলেও প্রচার প্রচারণা ও ভোটযুদ্ধে মাঠে দেখা যায়নি তাদের।

খুলনার ৯টি উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ তিন পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই গণসংযোগ শুরু করছেন।

এরমধ্যে রূপসা উপজেলায় আ’লীগের ১০জন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিৎ অধিকারী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশা, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, বেলফুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ অলিউর রহমান, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও আইচগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আলী আকবার, মালিক সরোয়ার উদ্দিন, নৈহাটি ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মিনা, প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য সরদার আবুল কাসেম ডাবলু ও সরদার ফেরদৌস আহমেদ।

দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির ডা. সৈয়দ আবুল কাশেমের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি জেলা জাতীয় যুব সংহতির জেলা সভাপতি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এভাবে অন্যান্য উপজেলায়ও ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।

বটিয়াঘাটায় ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম খান, এড. নিতাই চন্দ্র রায়, নব কুমার চক্রবর্তী, মনোরঞ্জন মণ্ডল, মোশারেফ হোসেন মুসা, শেখ হাদিউজ্জামান, মানস পাল, প্রফুল্ল কুমার রায় ও শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী সমিরণ গোলদার। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. ইকরাম শেখ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইনের নাম শোনা যাচ্ছে।

দাকোপে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেনসহ বেশ কয়েক জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও প্রার্থী হতে পারেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এড এম এম রুহুল আমিন।

কয়রায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মো. তমিজ উদ্দিন, ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত মো. মহসিন রেজা, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম মো. শফিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের নাম শোনা যাচ্ছে।

ডুমুরিয়ায় ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত গুটুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা সারোয়ার, কাজী আলমগীর, সুরঞ্জন বৈদ্য, হুমায়ুন কবির বুলু, মোস্তফা কামাল খোকন, সেলিম আক্তার স্বপন, ও শাহনেওয়াজ জোয়ার্দ্দার। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সিরাজুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিনা দৌলতের নাম শোনা যাচ্ছে।

পাইকগাছায় বর্তমান চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এড. বাবর আলী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এড. প্রশান্ত মণ্ডল ও গুলজার রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।

ফুলতলায় ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আকরাম হোসেনসহ একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।

সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই সব সময় এলাকায় যাতায়াত করেন, সাধারণ ভোটারদের খোঁজ খবর নেন। আবার অনেকের নামই শোনেনি এমন প্রার্থীও আছে। এছাড়াও কয়েকজন প্রার্থী জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে থাকলেও ৫বছরে তাদের একবার এলাকায় দেখা যায়নি। এবারের নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীরা অংশ নেবে বলে আশা করছেন তারা।

উল্লেখ্য, খুলনা জেলায় ১৮লাখ ৯৮৯জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৯লাখ ২হাজার ৯৫০জন ও নারী রয়েছেন ৮লাখ ৯৮হাজার ৩৯জন। ভোট কেন্দ্র ৭৮৬টি ও কক্ষ (বুথ) ৩হাজার ৮৫৭টি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর