ইয়াবা পাচারের নতুন কৌশল পাকস্থলী

চট্টগ্রাম, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 16:47:12

একদিকে আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি অন্যদিকে পাচারকারীদের নতুন নতুন কৌশল। নৌ-সড়ক পথের পর ইয়াবা পাচারে এবার আলোচনায় এসেছে আকাশপথ ও শরীরের পাকস্থলীতে অভিনব কায়দায় রেখে পাচার করার তথ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর কারাগারের অভ্যন্তরের মিলছে ইয়াবা। পাচারকারীদের নিত্য নতুন কৌশল নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত ১০দিনে পৃথকভাবে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার হয়েছে ১১ হাজার ১৩০ পিস ইয়াবা। এসময় আটক করা হয়েছে তিন জনকে। পাচারকারীরা কেউ লাগেজে আবার কেউ মামলার ফাইলের ভেতর করে এসব ইয়াবা পাচার করতে চেয়েছিল।

এছাড়াও কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে গত বছরের ১ ডিসেম্বর নাফিজা আক্তার নামে এক তরুণীকে ৭৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ । সে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটক সেজে ইয়াবা পাচার করছিল বলে স্বীকার করে। ৯ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে ১৮০০ পিস ইয়াবাসহ কথিত বাবা-মেয়েকে আটক করে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের গোয়েন্দারা।

গত বছরের ৩০ অক্টোবর ১ হাজার ৯২৫ পিস ইয়াবাসহ খোরশিদা করিম নামে এক আওয়ামী লীগ নেত্রীকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে, জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবাসহ আটক হওয়ার পর মামলার আসামিদের পাকস্থলীতে মিলছে ইয়াবা।

গত কয়েক মাসে ৮ জন হাজতির পাকস্থলী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইয়াবা। তাদের মধ্যে, গতকাল ১৭ জানুয়ারি মোহাম্মদ শাহজালাল প্রকাশ আব্দুইয়া (১৯) নামে এক হাজতির পাকস্থলী থেকে ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ৬০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় নুরুল হাশেম (১৮) নামে এক হাজতির পাকস্থলী থেকে।

এরআগে হাশেম ইয়াবাসহ আটক হওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে আসে। গত বছরের ৫ নভেম্বর শহীদ উল্লাহ নামে এক হাজতির পাকস্থলী থেকে ১ হাজার ৮০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর বেমারন তংচংঙ্গা নামে এক হাজতির পাকস্থলীতে মিলেছে ৯৫০ পিস ইয়াবা।

ইয়াবা নিয়ে আটক হওয়ার পর সদ্য জামিনে বের হওয়া সদর উপজেলার ঈদগাঁওয়ের সুমন (ছদ্মনাম) বার্তা ২৪.কমকে বলেন, টেকনাফের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা প্রতিটি পোটলায় ১২ পিস করে ইয়াবা দিয়ে পাচারকারীকে কলা দিয়ে খাওয়ায়। এরপর পাচারকারী আনে কক্সবাজার শহরে। তারপর এটি চলে যায় বিমানযাত্রীর কাছে। সে এটি ঢাকার পার্টির কাছে নিয়ে যায়।

সুমন আরও জানায়, একজন পাচারকারী প্রায় তার পেটে ১২০০ পিস ইয়াবা খেয়ে নিতে পারে। যা এজন পাচারকারীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদি কোন কারণে বেশীদিন পেটের মধ্যে ইয়াবা রাখতে হয় তাহলে পাচারকারীর চোখে কাল দাগ চলে আসে। আমিও খেয়ে পাচার করতাম। প্রতি চালানে ৪০ হাজার টাকা করে দিতো ব্যবসায়ীরা।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, নতুন নতুন কৌশলে পাচার অব্যাহত রয়েছে। আত্মসমর্পণ আর ইয়াবা পাচার কখনো একসাথে চলতে পারে না। ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কৌশলে ইয়াবা পাচার করছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।

পিপলস্ ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের নজরদারির কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টে পাচারকারীদের ব্যবহার করছে। যেহেতু আত্মসমর্পণের কথা-বার্তা চলছে এমন অবস্থায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের পাচার অব্যাহত রেখেছে। যা আত্মসমর্পণে সঠিক ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আসছে কিনা তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে।

মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ইয়াবা বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের চোখে আড়াল করতে পাচারকারী ও ব্যবসায়ীরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বার্তা ২৪.কমকে বলেন, বিমানবন্দরের যাত্রী সেজে ইয়াবা পাচার শুরু হয়েছে। পুলিশের নজরদারিতে বেশ কয়েকজন আটকও হয়েছে। বিমানবন্দর ও আশেপাশের এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে জানতে চাইলে কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশীদ আকন্দ বার্তা ২৪.কমকে জানান, নবাগত হাজতির পাকস্থলীতে আজও ইয়াবা মিলেছে। গত কয়েক মাসে প্রায় ৭ হাজতির পাকস্থলীতে ইয়াবা পাওয়া যায়। যা বিশ্বাস করাও কঠিন। তবে আমরা নবাগত হাজতিদের গতিবিধি লক্ষ্য করছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর