রক্তের দাগ মুছে ফেলা এই পন্টুনেই ঝরে ৫ প্রাণ

, জাতীয়

রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা ২৪.কম, ঢাকা | 2024-04-16 18:42:48

সদরঘাটের ১১ নাম্বার পন্টুন। ধুয়ে মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। নোঙর ভেড়ানো লঞ্চগুলো সারি সারি বাধা। রক্তের দাগ নেই; নেই প্রাণ ঝরে যাওয়ার কোনো চিহ্নও! পাশেই মাত্র কয়েক হাত দূরে বিএইডাব্লিউটিএ’র ট্রাফিক বক্স। এ সময় ঘাটে নোঙর ফেলতে যাওয়া এম.ভি অভিযান-৩ নামের একটি লঞ্চকে নির্দেশনা দিচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। সব চলছে স্বাভাবিক নিয়মে।

অথচ এই পন্টুনে দাঁড়িয়ে থাকা লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে প্রাণ যায় ৫ জনের। মুহূর্তেই বিষাদের রূপ নেই ঈদের দিনের বিকেলটা। পন্টুনে পড়ে থাকা রক্তাক্ত দেহগুলো ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমে। বিষাদ ছেয়ে যায় গোটা দেশে।

তবে এই প্রাণের বিনিময়ে এখন সদরঘাটে যেন শৃঙ্খলা ফিরেছে। লঞ্চ শ্রমিকরা জানালেন, কয়েকদিন আগেও ঘাটে লঞ্চ নোঙর করতে এতো তৎপরতা দেখা যায়নি। এখন নিয়ম মেনে নোঙর করানো হচ্ছে লঞ্চগুলোকে।


আর মঙ্গলবার ( ১৬ এপ্রিল) সেই দৃশ্য দেখা গেলো সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে। চিরচেনা ভিড় নেই। ঘাটে সারিবদ্ধভাবে বাধা লঞ্চগুলো। মাঝেমধ্যে দুই একজন যাত্রী এলেও নির্ধারিত সময় না হওয়ায় ছাড়ছে না কোনো লঞ্চ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৌযান কর্মী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, পদ্মা সেতু হবার পর থেকে এমনিতেই সদরঘাটে যাত্রীর আনাগোনা নেই। দুই ঈদে কিছু যাত্রী হলেও এবার ঈদের দিনে অনাকাঙ্ক্ষিত যে দুর্ঘটনা ঘটলো তাতে মানুষ আরও ভয় পেয়েছে। একেকটা রশি অন্তত ৮/১০ মণ ওজনের হয়ে থাকে। এই রশি সহজে ছিঁড়ে যাওয়ার কথা না। তবে সেদিন যেই রশি ছিঁড়ে গেছে তা কিছুটা দুর্বল ছিলো, তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটার কথা না। এছাড়া ঘাটে দায়িত্ব পালন করা (বিআইডাব্লিউটিএ) এর কর্মকর্তাদের সারাবছর খুঁজে পাওয়া যায় না। পাঁচটা মানুষ মারা গেছে, এখন তারা প্রতিদিন এসে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে এটা ঠিক আছে কিনা? ঐটা ঠিক আছে কিনা কতো কি! তবে আমি লঞ্চের চালকের কোন দোষ দেখি না। যাত্রী নিতে লঞ্চ ঘাটে আসবে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এখানে অন্য লঞ্চের সমস্যা হচ্ছে কিনা- সেটা তো আগে ঘাটের লোকজন দেখার কথা ছিলো।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এর সদরঘাটের অফিসে গিয়ে দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসের এক কর্মচারী বার্তা২৪.কম’কে জানান, সবাই প্রধান কার্যালয়ে মিটিংয়ে গেছেন।


নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, পাঁচ যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দায় বিআইডব্লিউটিএ’র ট্রাফিক বিভাগ কোনভাবে এড়াতে পারে না। একটা লঞ্চ কখন ঘাটে ভিড়বে বা ছাড়বে, কোথায় নোঙর করবে তা দেখভাল করার দায়িত্ব তাদের। ঘটনার সময় দায়িত্বরত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণেই মূলত এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে হচ্ছে। যদি এম.ভি ফারহান ৪ লঞ্চটিকে ঘাটে ভিড়তে না দিতো বা অপেক্ষা করতে বলতো। অথবা অন্য লঞ্চ দুটির রশি একটু ঢিল করে দিতো তাহলে হয়তো এই পাঁচটা জীবন বাঁচানো যেতো। ঘটনার পূঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষেই জানা যাবে কার দোষ ছিলো।

সেদিন যা ঘটেছিল...

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে সেদিন ( ১১ এপ্রিল ) ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে নোঙর করে রাখা লঞ্চের রশি ছিঁড়ে অন্তত ৫জন যাত্রী মারা যায়। নিহতদের মধ্যে ১ জন নারী, ১ জন শিশু ও ৩ জন পুরুষ ছিলো।

সদরঘাট লঞ্চঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এমভি তাশরিফ ৪ ও এমভি পূবালী ১ লঞ্চ দুটি রশি দিয়ে পন্টুনে বাঁধা ছিল। এ দুই লঞ্চের মাঝ দিয়ে ফারহান নামের আরেকটি লঞ্চ ঢুকতে গেলে এমভি তাশরিফ ৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়। আর তাতেই মৃত্যু হয় পাঁচ হতভাগ্যের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর