সমৃদ্ধিতে ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়ালেও স্বাধীনতা সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-04-16 16:56:14

২০২৩ সালে বাংলাদেশ সমৃদ্ধিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেলেও স্বাধীনতার সূচকে দেশগুলো থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দুটি সংস্থা।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে ইউনাইটেড স্টেটস্ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আটলান্টিক কাউন্সিলের নতুন বৈশ্বিক স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি প্রতিবেদনের (গ্লোবাল ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি রিপোর্ট) ফলাফল জানাতে সমৃদ্ধি ও সুশাসন সম্মেলনের আয়োজন করে।

প্রতিবেদনে সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশকে 'অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসচ্ছল' এবং স্বাধীনতা সূচকে 'অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাধীন' হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

২০২৩ সালের জন্য করা এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৪টি দেশের মধ্যে ৯৯তম। তালিকায় ভারতের অবস্থান ১৪৬তম এবং পাকিস্তানের অবস্থান ১৫০তম। কিন্তু স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম যেখানে ভারত ১০৪তম এবং পাকিস্তান ১১৩তম অবস্থানে রয়েছে।

সমৃদ্ধি সূচকের তালিকা করার জন্য স্বাস্থ্য, বৈষম্য, পরিবেশগত অবস্থা, সংখ্যালঘু অধিকার এবং শিক্ষা সহ মাথাপিছু জিডিপির মতো বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীনতা সূচকের তালিকা করার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইনি অবস্থার পরিমাপ করা হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্কটির গবেষণায় দেখা গেছে, মৌলিক স্বাধীনতা জোরদার করলে সেটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে গতিশীল করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী দলীয় ব্যবস্থার দিকে শক্তিশালী পরিবর্তন এসেছে। বিরোধী দলকে বয়কট করে সেটি পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ তার ১৫ বছরের শাসনকাল টিকিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকার প্রধান হতে যাচ্ছেন। এটি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিলেও কর্তৃত্ববাদী দলীয় ব্যবস্থাগুলো প্রায়ই বিভিন্ন ঝুঁকির মুখোমুখি হয় যা সুশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই ঝুঁকিগুলো কমানোর জন্য রাজনীতি, সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

সূচক

সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, আটলান্টিক কাউন্সিল যে ১৬৪টি দেশকে তালিকাভুক্ত সেখানে (স্বাধীনতা সূচকে) 'অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাধীন' হিসেবে তালিকাভুক্ত দেশগুলো 'সমৃদ্ধশালী' দেশ হিসেবে (সমৃদ্ধি সূচকে) তালিকাভুক্ত হয়নি। এটি থেকে বোঝা যায়, সমৃদ্ধশালী হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনি স্বাধীনতা বৃদ্ধি করতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশ দুর্নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সমস্যাগুলো এড়িয়ে না গিয়ে বরং সমস্যা মেনে নেওয়া ও সক্রিয়ভাবে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করাই আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।

সম্মেলনের মূল বক্তা আটলান্টিক কাউন্সিলের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি কেন্দ্রের পরিচালক জোসেফ লেমোইন প্রতিবেদনের মূল ফলাফলগুলো তুলে ধরেন। প্রতিবেদনে স্বাধীনতা সূচক এবং সমৃদ্ধি সূচকের ওপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক এবং শাসন সূচক ব্যবহার করে একটি জাতির অর্থনৈতিক অবস্থানের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

জোসেফ লেমোইন বলেন, তথ্যগুলো থেকে দেখা যায়, অধিক স্বাধীনতার দেশগুলো বেশি সমৃদ্ধি উপভোগ করে এবং কম স্বাধীনতার দেশগুলোর সমৃদ্ধি নিচের দিকে। একটি দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে উন্নত করে একটি শক্তিশালী আইনি পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি স্বাগত জানাতে পারে।

তিনি আরও বলেন, অধিক স্বাধীন দেশগুলো কম স্বাধীন দেশের তুলনায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পায়। সামগ্রিকভাবে স্বাধীনতা সূচক প্রস্তাব করে, স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার মূল চাবিকাঠি।

সম্মেলনে সরকারের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, দাতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর