কক্সবাজারে হোটেল-মোটেলে ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব

চট্টগ্রাম, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কক্সবাজার, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 13:39:28

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ। কিন্তু এসব হোটেল-মোটেলে এপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভাড়া বাবদ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। পর্যটকদের কাছ থেকে ভ্যাট নেওয়া হলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেন না তারা। ফলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ভ্যাট হারাচ্ছে সরকার।

অভিযোগ আছে, ভরা মৌসুমে পর্যটন এলাকার আবাসিক হোটেলগুলো রমরমা ব্যবসা করে। কিন্তু হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ সরকারকে সঠিকভাবে মূসক পরিশোধ করে না। কখনো পর্যটকের সংখ্যা কম দেখিয়ে, কখনো ভ্যাটের নিবন্ধন না নিয়ে, আবার কখনো হোটেল ভাড়া কম দেখিয়ে এসব মূসক ফাঁকি দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর অক্টোবর থেকে পরের বছর এপ্রিল পর্যন্ত চলে পর্যটন মৌসুম। এ সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে আসেন। বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট, ফ্ল্যাট, কটেজসহ আবাসিক স্থাপনাগুলোতে পর্যটক সমাগম বাড়ে। পাশাপাশি তাদের সেবার পরিধিও বাড়ে। কিন্তু পর্যটনের ‘আবাসিক’ খাত থেকে রাজস্ব আয় মোটেও সন্তোষজনক নয়।

কলাতলীর হোটেল সি প্যালেসের বিপরীতে অবস্থিত ‘হোটেল সি ব্রিজ’। হোটেলটি বর্তমানে ভাড়ায় পরিচালনা করেন রহমত উল্লাহ। হোটেলে কক্ষ আছে ৫০টি। গত ডিসেম্বরে এই হোটেলে কক্ষ ভাড়া বাবদ আয় হয়েছে ১২ লাখ টাকা। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ ডিসেম্বর মাসে রুম বিক্রি দেখিয়েছে মাত্র এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিপরীতে নামমাত্র ভ্যাট পরিশোধ করেছে। এছাড়া অন্যান্য সেবা বাবদ আরো প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ আছে হোটেলটির বিরুদ্ধে।

হোটেল সি আলিফের ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বেশিরভাগ রুম বিক্রিতে দালালদের ৫০ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। তাই কাগজে-কলমে যত টাকার রুম বিক্রি হয় বাস্তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ তত পায় না। তাই ভ্যাটে গরমিল হয়।’

কিন্তু দালালদের কমিশন বাদ দিয়ে হিসাব করলেও বিপুল পরিমাণ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

কলাতলীর প্রায় ১২টি হোটেলের মূসক চালান পর্যালোচনা করে ভ্যাট ফাঁকির ভয়াবহ এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অনেক পর্যটক এলাকার ফ্ল্যাটে ওঠেন। কিন্তু ফ্ল্যাট থেকে ভ্যাট আদায়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু এটি ভ্যাট আদায়ের অন্যতম একটি খাত হতে পারে।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে আবাসিক হোটেল রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু সেখানের অনেক প্রতিষ্ঠান কর দেওয়ার যোগ্য হলেও সেটা দেয় না। ফলে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক নয়।

এনবিআর’র নির্দেশনায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের অধিক্ষেত্রভুক্ত এলাকার হোটেল-রিসোর্টে সরেজমিন পরিদর্শন করা, রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করা, মদ জাতীয় পানীয় সরবরাহ বা ফ্লোর শোর আয়োজন করা হলে তার আলাদা হিসাব নেওয়া, হোটেলে অবস্থানকারী পর্যটক সংখ্যার সঙ্গে ঘোষিত সংখ্যা যাচাই করার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু সেখানে এসব নিদের্শনা পালন করা হয় না।

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কক্সবাজার সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা আবছার উদ্দিন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘হোটেল মালিকেরা যে রেটে তালিকা দেন সে অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা হয়। যদি তারা তালিকার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।’

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম শেখ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘হোটেল-মোটেল জোনে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যাক্তি এখনো ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ভ্যাটের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, হোটেল ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ এবং মদ জাতীয় পানীয় সরবরাহ বা বিদেশি শিল্পীদের অনুষ্ঠানের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর