১২ বছর পর সুরমা নদীর তীরে বৈশাখী মেলা

, জাতীয়

মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2024-04-15 18:59:01

সিলেটের সুরমা নদীর তীরে প্রায় ১২ বছর পর বসলো বৈশাখী মেলা। রোববার (১৪ এপ্রিল) বর্ষবরণ উৎসব ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা সারদা হল ক্বিন ব্রিজ এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট’র আয়োজনে শুরু হয়।

মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

এদিকে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সব পণ্যের পসরা সাজানো হয়েছে। মেলায় হরেক রকমের পণ্যের ৪০টি স্টল রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেলা সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ প্রতি বছর সিলেট নগরীর রিকাবিজারস্থ প্রান্তিক চত্বরে বৈশাখী মেলার আয়োজন করত। পরবর্তীতে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সময়কালে দুই থেকে তিনবার ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দায়িত্বে থাকাকালীন একবার মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে সেগুলো এতো জাঁকজমকপূর্ণ ছিল না। সরদা হলের সামনে সুরমা নদীর তীরে প্রায় ১২ বছর পর ও সিলেট সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদের আয়োজনে দুই যুগ পর সাত দিনব্যাপী এই মেলা শুরু হয়।


সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সিলেটের ঐতিহাসিক কিন ব্রিজের নিচে সুরমা নদীর তীরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে পাশে ও আলী আমজাদের ঘরের সামনে বসেছে মেলা। মেলায় দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। পাশেই সারদা হলের সামনের মঞ্চে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় সঙ্গীত শিল্পীরা গান গেয়ে মাতাচ্ছেন দর্শনার্থীদের। এছাড়াও রয়েছে বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, নৌকা, শিশুদের জন্য ট্রেন। পহেলা বৈশাখের দিন থেকে শুরু হওয়া মেলায় দেখতে ভিড় করেছে শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সীরা। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজন দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে আগত দর্শনার্থীরা। সিলেট নগরীর মধ্যে এই রকম মেলা আয়োজন করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আগত দর্শনার্থীরা।

সিলেট নগরীর বাগবাড়ি বীরেন্দ্রনাথ জানান, বর্তমান প্রজন্ম বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য ভুলে যেতে বসেছে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে ভিন্নদেশের সংস্কৃতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাই। ঘরের গৃহবধূ থেকে তরুণ-তরুণীরা টিকটকে যেভাবে ঝুঁকছে তা আমাদের জন্য কল্যাণকর নয়। তাই প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত ছেলে-মেয়েদের বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পৃক্ত করা। এই মেলা যেন প্রতিবছর চালু থাকে তাই তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

মেলায় ঘুরতে আসা সিলেটের ওসমানী নগরের উসমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়ালি উল্লাহ বদরুল বলেন, বিগত কয়েক বছর রমজান ও করোনার কারণে আমাদের প্রাণের মেলা বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়নি। এবার আশা করব আমাদের সিটি মেয়র যেভাবে মেলা শুরু করেছেন এটি যেন ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। একটা সময় আমরা যখন স্কুল-কলেজে ছিলাম তখন বিভিন্ন উৎসবে মঞ্চ নাটক করেছি। এখন সেগুলো কমে গেছে।


অঞ্জনা দেব নামে আরেকজন বলেন, আমরা বাঙালি। প্রত্যেকটা উৎসব আমরা সাবাই মিলে মিশে যেন পালন করি। মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে।এই ধরনের মেলা নগরীর মধ্যে সচরাচর দেখা যায় না।

মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতিতে সিলেটের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। ‘বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা আমাদের প্রাণের উৎসব। হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করে বাঙালি জাতি এদিন উৎসবে মেতে ওঠেন।’ বাঙালি হিসেবে আমরা গর্বিত। সব ভেদাভেদ ভুলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় হোক আমাদের নববর্ষের অঙ্গীকার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয় তারাই নববর্ষের বিরোধিতা করছে। তারা এখনো বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখে। পাকিস্তানের চিন্তা চেতনায় তারা এদেশকে চালাতে চায়। তাদের এই দুঃস্বপ্ন কোনদিনও বাস্তব হবেনা। আমরা বাংলাদেশের যে উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি তার একমাত্র অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সিলেটে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলার ঐতিহ্য লালন করে সব অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করবে সিলেট সিটি করপোরেশন। যে জাতি তার শিকড় ধরে রাখে সে জাতি তত বেশি এগিয়ে যায়। আমাদের অতীতের ইতিহাস গৌরবের। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমরা বাঙালি, আমরা বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক।

এবিষয়ে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট’র সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, প্রায় দুই যুগ পর এবারের বৈশাখী মেলা আমাদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সময় কয়েকবার বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাই তখন জমে উঠেনি এবং এভাবে জাঁকজমকপূর্ণ ছিল না। এখন মেলা হওয়াতে মানুষের মাঝে খুব উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে নগরীর ভেতরে এমন মেলার আয়োজন হওয়াতে মানুষ খুশি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর