নাফ নদীতে মিয়ানমারের জাহাজ দেখার পরই এপাড়ে বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার | 2024-03-30 06:22:29

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর সীমান্তের নাফ নদীর ওপাড়ে মিয়ানমারের একটি জাহাজ দেখতে পাওয়ার পর থেকে এপাড়ে বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ শোনা যায়।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেশটির জলসীমায় জাহাজটি অবস্থান করতে দেখা যায় বলে স্থানীয়রা জানান। এ সময় থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও জাহাজটি সরে যাওয়ার পর বিস্ফোরণের শব্দ বেড়ে যায়। একইভাবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে গোলার বিকট শব্দ শোনা গেছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে থেমে থেমে এই গোলার বিকট শব্দ আসছে।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টা জাহাজটি সেখানে দেখা যায়, তারপর সরে যায়। আর তখন থেকেই শাহপরী দ্বীপের সীমান্তে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তারা মাঝেমধ্যে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। কিন্তু গতকাল বিকাল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ১০টির বেশি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।

সেখানকার লোকজন জানান, এর আগে ২১ মার্চ একই জায়গায় মিয়ানমারের ‘জাহাজ’ দেখা গিয়েছিল। যেখানে এ ধরনের জাহাজ সচরাচর দেখা যায় না। তারা জানান, সকালে নদীতে কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর জাহাজটি দেখা যায়। জাহাজটি নদীতে কখন এসেছিল নিশ্চিত করে তা কেউ বলতে পারেননি।

শাহপরীর দ্বীপের আব্দুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ কিছুটা কম শোনা গিয়েছিল। তবে শুক্রবার সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের একটি যুদ্ধজাহাজ দেখা গেছে। এটি চলে যাওয়ার পর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ বেড়েছে।’

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, 'গোলাগুলি বা মর্টার শেলের বিস্ফোরণের শব্দ বৃহস্পতিবার থেকে কমে গিয়েছিল। তবে শুক্রবার ৩টার দিকে পরপর কয়েকটি শব্দ শোনা গেছে।'

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কিছুটা কমলেও দুপুরের পর আবারও থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।'

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সকালে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের জলসীমায় একটি বড় জাহাজ দেখা যায়। এটি যুদ্ধজাহাজ নাকি অন্য কোনো জাহাজ তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু জাহাজটি দুপুরের আগেই সেখান থেকে চলে যায়।'

তিনি বলেন, 'কিন্তু জাহাজটি নাফ নদী সীমান্ত থেকে সরে যাওয়ার পরপরই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিপরীতে মায়ানমারের অপর প্রান্ত থেকে মাঝে মাঝে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। এ দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই এবং মিয়ানমারের পক্ষে যে সংঘাত চলছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।'

গত কয়েক মাস ধরে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর লড়াই চলছে। রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনা পোস্ট দখল করে বিদ্রোহীরা ইতোমধ্যেই সাফল্য দেখিয়েছে। মিয়ানমারে দ্বন্দ্ব সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।

সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান লড়াইয়ের মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা নিহত হন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর