ডলার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে চরম সংকটে স্টিল শিল্প

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-03-19 14:35:58

বর্তমানে ডলার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে চরম সংকটে পড়েছে স্টিল শিল্প। ডলার সংকটের কারণে স্টিলের কাঁচামাল সাপ্লাই ব্যাহত হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরামে ‘ডলার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্টিল শিল্পের চরম সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’।

লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডলার সংকটের কারণে স্টিলের কাঁচামাল আমদানির জন্য দেশের ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। এতে স্টিলের কাঁচামাল কম আসছে এবং কাঁচামালের সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হচ্ছে। স্টিল শিল্পে কাঁচামাল, কেমিক্যাল ও যন্ত্রাংশের ৮৫ শতাংশ আমদানি নির্ভর। বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ৮৫ টাকা থেকে প্রায় ১২৫ টাকায় উঠেছে। এতে আমাদের চলতি মূলধনে ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে এবং অধিক মূলধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, এলসি কমিশন বৃদ্ধি, এলসি মার্জিন বৃদ্ধি, ডিসকাউন্টিং ব্যাংকের মাধ্যমে ডিসকাউন্টিং রেইট বৃদ্ধি, এস ও এফ আর প্লাস রেইট বৃদ্ধি, কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট, ট্যাক্স এবং অন্যান্য চার্জ বৃদ্ধির কারণেও চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, ডলার মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে স্টিল উৎপাদনকারীদের চলতি মূলধন ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত মূলধনের প্রয়োজন হওয়ায় ব্যাংকে গ্রাহক ঋণসীমা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গত বছর বিদ্যুতের মূল্য প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে এবং এবার বাড়িয়েছে ১০ শতাংশ। ডিমান্ড চার্জের ওপরও মূল্য ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য ধাপে ধাপে আরও বাড়ানো হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়। বিদ্যুতের এই মূল্যবৃদ্ধি স্টিল সেক্টরে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

আরও বলা হয়, গত বছরে গ্যাসের দাম প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কিউবিক ঘনমিটার গ্যাস ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা হয়েছে, যার ফলে স্টিল উৎপাদনে প্রতিটনে প্রায় ৩ টাকা অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে।

মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আয়কর আইনের মৌলিক-নীতি হচ্ছে প্রকৃত আয়ের ওপর আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মূল্যায়নের ভিত্তিতে আয়কর নির্ধারণ করা। বর্তমানে বাজেটে ২ শতাংশ উৎস কর কর্তন মাত্রাতিরিক্ত এবং স্টিল সেক্টরের প্রকৃত মুনাফার সঙ্গে এর কোন সামাঞ্জস্য নেই। এই ২ শতাংশ কোন মূল্যায়িত কর নয়। এটি হলো ন্যূনতম কর। কোন প্রকার আয় বা মুনাফা ব্যতীত উৎপাদনকারীকে আয়কর প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদনকারীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের জন্য আমদানি পর্যায়ে টন প্রতি ৫০০ টাকা ন্যূনতম অগ্রিম আয়কর প্রদান করতে হয়। ন্যূনতম শর্তের কারণে এই আয়কর সমন্বয় বা ফেরতযোগ্য নয়।

সম্মেলন শেষে স্টিল শিল্প রক্ষার্থে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চলতি মূলধনের যে ৪০ শতাংশ ঘাটতি হয়েছে তা পরিশোধের জন্য স্বল্পমেয়াদি ঋণকে ১২ বছর পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা।

>> বৈদেশিক মুদ্রার মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষয়ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য এলসি সুবিধা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা।

>> স্টিল শিল্পের জন্য ব্যাংকে বর্তমান গ্রাহক ঋণসীমা গণনার ক্ষেত্রে বর্তমান ১৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্লান্টের ন্যায় ২৫ শতাংশ হারে নন-ফান্ডেড দায় গণনার বিষয় বিবেচনা করা।

>> বিদ্যুতের নতুন দাম ফেব্রুয়ারি মাসের পরিবর্তে মার্চ হতে কার্যকর করা। ভারী শিল্প পর্যায়ে বাল্ক বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের শিল্পকারখানা সমূহ চলমান রাখার স্বার্থে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনে এক্ষেত্রে বিদ্যুতের যে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে তা বৃদ্ধি না করা। বিদ্যুতের ডিমান্ড চার্জের ক্ষেত্রে ২৯ ফেব্রুয়ারির প্রজ্ঞাপনে যে ন্যূনতম চার্জ বৃদ্ধি করা হয়েছে তা বৃদ্ধি না করা।

>> স্টিল সেক্টরের জন্য উৎসে কর কর্তন ২% এর পরিবর্তে ০.৫০% নির্ধারণ করা। স্টিলের কাঁচামাল ক্র্যাপের জন্য আমদানি পর্যায়ে ন্যূনতম অগ্রিম আয়কর টনপ্রতি ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা।

>> শিল্প মন্ত্রণালয়ের সি এম সনদ ফি বৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন বাতিল করা এবং সি এম সনদ ফি টার্নওভারের ভিত্তিতে নির্ধারণ না করে নির্দিষ্ট করে দেওয়া।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ার গ্রুপ, বি এস আর এম, সালাম স্টিলসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় স্টিল শিল্পের কর্ণধারগণ। এমন পরিস্থিতিতে স্টিল শিল্পকে রক্ষার লক্ষ্যে খাতটিকে সুরক্ষা দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর