সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে চান চট্টগ্রামের ১৫ নেত্রী

চট্টগ্রাম, জাতীয়

আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-09-01 10:38:04

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে লবিং করছেন চট্টগ্রামের ১৫ নারী নেত্রী। তারা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মন্ত্রীদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছেন। তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে যার যার সফলতা তুলে ধরছেন অনেকে। কেউ কেউ প্রয়াত বাবা কিংবা স্বামীর অবদান ও পরিচয়কে অবলম্বন করে এমপি হওয়ার চেষ্টা করছেন।

অনেক প্রার্থী দাবি করছেন, তাদের এমপি করা হলে সাধারণ নারীদের মধ্যে গতিশীলতা আসবে। গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করছেন।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত আসনের তফসিল ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হয়। দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জনকে এমপি করা হয়। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান, সাবেক চসিক কাউন্সিলর সাবিহা মুছা এবং রাঙামাটির নারী নেত্রী ফিরোজা বেগম চিনু। এবারও এই ৩ জনসহ মাঠে নেমেছেন মোট ১৫ জন নারী নেত্রী। বার্তা২৪.কম’র সাথে আলাপকালে নেত্রীরা মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, 'চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে এবার সরাসরি ভোটে এমপি নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। তিন প্রজন্ম ধরে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নারী সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় আমার যোগাযোগ আরও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী আস্থা রাখলে আবারও প্রতিদান দিতে প্রস্তুত রয়েছি।'

চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ির সাবেক এমপি মরহুম রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেও পরে দলীয় সভাপতির নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দু'বারই আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে এমপি হন তরীকতের নজিবুল।

পূর্বে দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান করে তিনি সরে গেছেন উল্লেখ করে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, ‘ফটিকছড়ির মাটি ও মানুষের নেতা মরহুম রফিকুল আনোয়ারের কন্যা হিসেবে এ উপজেলার মানুষের সঙ্গে তার যে আত্মার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এবার বাবাকে মূল্যায়ন করে হলেও আমাকে মনোনয়ন দেবেন। এমন প্রত্যাশা করছি।’

প্রয়াত সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনও সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে চান। ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি ও উপমন্ত্রী হওয়ায় লবিংয়েও এগিয়ে আছেন তিনি। নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য মনে করলে তার আস্থার মূল্য দিতে প্রস্তুত আছি।'

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এবার সরাসরি মনোনয়ন চেয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব বলেন, 'দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। দলের মহিলা সংগঠনের সভাপতি ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে একজন কর্মী হিসেবে সংগঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নেত্রী মনোনয়ন দিলে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমি।'

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক নারী কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানু বলেন, ‘দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি নির্মোহভাবে। পদ-পদবির লোভ কখনোই স্পর্শ করেনি। সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি পদে আমাকে একবার বাছাইও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে আমাকে ছাড় দিতে হয়। আশা করছি, এবার আস্থা রেখে যোগ্য নারীদের বেছে নেবেন তিনি।’

এ ছাড়াও এবার সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। তিনি বলেন, ‘কাকে মনোনয়ন দেবেন সেটি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা। তবে আমি দীর্ঘদিন নেত্রীর আস্তাভাজন ছিলাম। এবার আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশাবাদী।’

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক মহিলা সম্পাদিকা নাজনীন সরোয়ার কাবেরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমাকে নেত্রী এবার মূল্যায়ন করবেন।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুমানা নাসরীন রুমুও বলেন, 'দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। মূল্যায়ন প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই করবেন।'

এছাড়াও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা মান্নান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুণ লুবনা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার বেগম, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী, কক্সবাজার মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, নগর যুব মহিলা লীগের সম্পাদিকা নাজমা আক্তার মিতা।

প্রসঙ্গত, আইন প্রণয়নে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালে সংবিধানে বিশেষ কোটা চালু করা হয়। তারপর থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ থাকছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর